শেষ করলাম অসাধারণ একটি বই। অনেক দিন পর এক দৌড়েই শেষ করে ফেললাম বইটি। মনের কোণে জমে থাকা অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর পাওয়ায় এটি সম্ভব হয়েছে। ছোটকাল হতে দেশ ১৭৫৭, ১৮৫৭, ১৯০৬, ১৯১১, ১৯৪৭, ১৯৫২, ১৯৭১ ইত্যাদি সময়ের চলমান ঘটনাগুলো সম্পর্কে টেক্সটবুক থেকে কিছু বিষয় জানতে পারলেও এই সময়ের ক্রনোলোজিক্যাল বিস্তারিত বর্ণনা এবং এর পেছনের যারা ঘটক ও অবদায়ক তাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানা হয়ে উঠেনি।
বিভিন্ন সময়ে দেখি ওশুনি হায়দরাবাদ, কাশ্মীর, জুনাগড়, ম্যান্ডেভার ইত্যাদি রাজ্যগুলো ভারতের জোরপূর্বক দখলের কথা। ১৯৪৭ সালে যখন ভারত – পাকিস্তান বিভক্ত হলো, তখন সেই রাজ্যগুলো কেন ভারত বা পাকিস্তানে বিভাজিত হয়নি, কোন প্রেক্ষাপট তাদের পাকিস্তান বা ভারতে যোগদানে দেরি করতে সাহায্য করেছিল, কেন ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান আক্রমণ করে, সেই সময় পাকিস্তানের ভূমিকা কি ছিল, কেন এবং কোন প্রেক্ষাপটে সম্ভব হয়েছিল এই ভারত-পাকিস্তান বিভাজন। দ্বিজাতি তত্ত্ব কি, কেন, কিভাবে, কোন প্রেক্ষাপটে, কাদের নিকট থেকে এই তত্ত্ব প্রথম প্রকাশিত হয় এবং কিভাবে তা বাস্তবরুপ লাভ করে।
পাকিস্তানের স্বাধীনতায় কায়েদে আযম জিন্নাহর ভূমিকা কি, কিভাবে তিনি ‘কায়েদে আযম’ (মহান নেতা) হয়ে উঠেন, নেহেরু কিংবা গান্ধীর সাথে জিন্নাহর রাজনৈতিক পরিচয়, আন্দোলনে সংগ্রামে তাদের ভূমিকা, যে কংগ্রেস দিয়ে জিন্নাহ তার রাজনীতি শুরু করলেন তিনি কিভাবে হয়ে উঠলেন মুসলিম লীগের অবিসংবাদিত নেতা, যিনি ‘হিন্দু-মুসলিম’ ঐক্য প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের মহান নেতা তিনি কেন, কিভাবে এবং কোন প্রেক্ষাপট তাকে পাকিস্থান আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে বাধ্য করল, গান্ধীর বহুত্ববাদি রাজনীতি কিভাবে সন্ত্রাসবাদী নেহেরু-হিন্দু মহাসভার নেতাদের নিকট পরাজিত হলো, কিভাবে গান্ধী-জিন্নাহর “হিন্দু-মুসলিম” একজাতি তত্ত্ব এসব হিন্দুত্ববাদি নেতাদের “রাম রাজত্ব” প্রতিষ্ঠার স্বপ্নের নিকট পরাজিত হলো ইত্যাদি প্রশ্নোত্তরের অনবদ্য এক সংকলন করা হয়েছে এই বইটিতে।
১৯৪৭ সালে মুসলিম-হিন্দু-শিখ দাঙ্গা কেন, কিভাবে এবং কাদের প্ররোচনায় হয়েছিল? ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের সময় ১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগষ্ট কিভাবে এল, কিভাবে কোন প্রক্রিয়ায় দেশ স্বাধীন হলো, ইত্যাদি প্রশ্নগুলো লেখক এম এ মোহাইমেন চমৎকারভাবে উপস্থাপন এই বইয়ে। ২৭৭ পৃষ্ঠার এই বইটি হচ্ছে- “ইতিহাসের আলোকে দেশ বিভাগ ও কায়েদে আযম জিন্নাহ”।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” পড়ার সময় কলকাতা কেন্দ্রিক আন্দোলন ও দাঙ্গার যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে তা পূর্ণরুপে বুঝার জন্য বেশ সহায়ক হলো বইটি।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার যে বৃক্ষটি আমরা পেয়েছি, তার প্রাথমিক ভিত্তি রচিত হয়েছিল যেই ১৯৪৭ সালে, সেই ৪৭, ৪৭ পূর্ববর্তী নেতা-কর্মীদের সম্মানে যে কোন সাধারণ পাঠক পড়ে ফেলতে পারেন এই বইটি।
“স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন” বহুল প্রচলিত এবং প্রমাণিত তত্ত্ব। এই তত্ত্বের প্রেক্ষিতে যারা এই বাঙ্গলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার লড়াকু সৈনিক ও অতন্দ্র প্রহরী হতে চান তাদের জন্য বইটি অবশ্যপাঠ্য।