ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ একটি মাল্ট-ন্যাশনাল কোম্পানী। এর ৬০ শতাংশেরও বেশী শেয়ার মধ্যপ্রাচ্যের ৫ দেশের উদ্দ্যোক্তাদের। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পলিসিহীনতা ও ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছাকৃত সৃষ্ট সংকটের মধ্যে দিয়েও ব্যাংকটি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে এগিয়েছে। বার বার হোচট খেয়েছে কিন্তু এর অগ্রযাত্রাকে কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি। ব্যাংকটির এই উত্তরনের পেছনে সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে সরকারী ব্যাংকগুলো ছেড়ে আসা সাহসী কিছু মেধাবী মানুষ, ‘সুদবিহীন স্লোগান’ ও ‘ইসলামী’ নামটি এবং বর্তমানে শুধুই এর নিবেদিতপ্রান কর্মীরা।
‘ইসলামী ব্যাংক জামায়াতের ব্যাংক’ এই ইমেজ সংকটটি কেন হল? চল্লিশ বছর ধরে এদেশে সৎ ছেলে তৈরি করছে শিবির। শিবিরের ছেলেরা কোথায় নাই, ব্র্যাক, গ্রামীন ব্যাংক, প্রশিকাসহ বিভিন্ন সরকারী ও বে-সরকারী প্রতিষ্ঠান এবং সর্বশেষ ডেসটিনিতেও লাখে লাখে কর্মী সাপ্লাই দিয়েছে শিবির। এগুলো তো জামায়াতের প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত হতে পারেনি তবে ইসলামী ব্যাংক কেন জামায়াতের প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্র্যান্ডিং হল। তাহলে অফিসারদের কারনে এই ব্র্যান্ডিংটি হয়নি হয়েছে ম্যানেজমেন্টের উপরের লেভেলের লোকদের প্রফেশনালিজম ছাড়া শুধুই নিরেট জামায়াত সংশ্লিষ্টতার কারনে। অথচ ব্যাংকটির শুধু এই দুর্নামটি ও বেতন-ভাতাদিতে ৩৩ নং ছাড়া আর প্রায় সকল ক্ষেত্রে প্রথম অবস্থানটি ধরে রেখেছে বর্তমান এই অস্থির সময় পর্যন্ত।
চারিদক থেকে বানের পানির মত সমস্যা ধেয়ে আসলেও, অফিসের গেটে ডিবি’র লোক দাঁড়িয়ে থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে যাচ্ছিল সবকিছুকে ব্যালান্স করে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক ও ট্রেনিং একাডেমীকে একাকার করে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা, ডিপ্লোমা, বিভিন্ন অজুহাতে পড়াশুনা করবার ও করাবার একটি প্রবনতা কোয়ালিটি অফিসারদের পেছনে ফেলে মুখস্তপ্রিয় কিছু বেজলেস অফিসারকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কাজ না করেই অথবা পড়াশুনা করে যদি বেতন পাওয়া যায় তবে তো অনেকেই এটি করতে চাইবে। প্রমোশনের জন্য রিটেন পরীক্ষা নেয়া হয় কিন্তু তার মার্ক যোগ করা হয় না শুধু পাশ করলেই চলে এভাবেই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেজলেস অফিসারগুলোতে এগিয়ে নিয়ে গেছে ইসলামী ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট। এই সুযোগে অনেক অফিসার ব্যাংকে ঢোকার পর এমবিএ(বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে), চারটি ডিপ্লোমা, এমবিএম, সিডিসিএস ইত্যাদি দ্বারা নিজেদের ফেব্রিকেটেড করেছে।
অনেকেই সিম্পল বিএ অথবা মাদ্রাসার ডিগ্রি দিয়ে জবে ঢুকে পরে এসব সার্টিফিকেট শো করেছে। আর যারা শুধুই ব্যাংক নিয়ে থাকল ম্যানেজমেন্ট তাদেরকে বঞ্চিত করে এই সুযোগ সন্ধানীদের এগিয়ে নিয়ে গেছে। এসব ডিগ্রি যারা নিচ্ছে তাদের অধিকাংশেরই ব্যাসিক ডিগ্রি দুর্বল। ফেব্রিকেটেড অফিসারগুলো কাজ জানেনা বা বোঝেনা তাই অধস্তনদের ম্যানেজও করতে পারেনা চৌকসতার সাথে ফলে কাজের ক্ষেত্রে একটি ভ্যাকুয়াম তৈরি হয়েছে। অল্পদিনের মধ্যেই হয়তো এটি দৃষ্টিগোচর হত কিন্তু তার আগেই ইসলামী ব্যাংকের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দিল এবারের ব্যাপকভাবে প্রমোশন না দেয়াটা। এটি হয়ত শেষ পর্যন্ত চার বছরের মাথায় পে-স্কেল দিয়ে রক্ষা করার চেষ্টা করা হবে কিন্তু যাদেরকে দিয়ে ব্যাংক সকল ক্ষেত্রে প্রথম হচ্ছে তাদেরকে দিনের পর দিন বঞ্চিত করে কতদিন সামনে এগিয়ে যাওয়া যাবে তা ভাববার বিষয়। আর এখন যুক্ত হয়েছে পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে সীমাহীন হয়রানি যদিও এ অফিসারগুলোর জব কনফারমেশনের আগেই পুলিশ ভেরিফিকেশন করানো হয়েছে অপরপক্ষে ম্যানেজমেন্টের অদ্ভুত নিরবতা।বোকা-সোকা মনিবের সুন্দরী বউকে সামলাতে না পারবার মতই মনে হচ্ছে।সরকার তথা পুলিশের ইসলামী ব্যাংকের অফিসারদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানি যেন এখন নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে অথচ ম্যানেজমেন্ট যেন দারুন অসহায়।
ইমেজ সংকট ও অফিসটাকেই ট্রেনিং সেন্টার তথা পরীক্ষাকেন্দ্র বানিয়ে ফেলবার এই দ্বিমুখী সমস্যা থেকে এক্ষুনি বের করে আনতে না পারলে আর হয়তো শেষ রক্ষা হবেনা।আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রফেশনালিজমের অনুপস্থিতি ও ব্যপক ভিত্তিক আত্নীয়করনই আন্তর্জাতিক মানে উঠতে দেয়না। অয়লিং-এর ছড়াছড়ির কারনেই ৩য় বিশ্বের প্রতিষ্ঠানগুলো সকল ক্ষেত্রে পেছনে পড়ে আছে। দেখবেন কারো পরিচিত বা কয়েকজনের আশির্বাদপুষ্ট কারনে আমাদের দেশে নিয়োগ পায় কোম্পানির এমডি/চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে ছলিমুদ্দি অফিসার ও সিকিউরিটি পর্যন্ত। ইসলামী ব্যাংকও এর বাইরে নয় বরং আরো বেশী করে আক্রান্ত।অথচ বিদেশী কোম্পানীগুলো প্রফেশনালিজমের উপরে কোনকিছুকেই মুল্যায়ন করেনা। বিল গেটস, স্টিভ জবস থেকে শুরু করে কেউই তাদের আত্নীয় বা সন্তানকে তাদের স্থলাভিসিক্ত করতে পারেনি।
বর্তমান ইমেজ সংকট থেকে বেরিয়ে আসবার পথ:
ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান এই ইমেজ সংকট থেকে বেরিয়ে আসবার একটাই পথ- একটি বিদেশী মাল্টিন্যাশনাল ব্যাংকের কোন এক্সপার্টকে এই ব্যাংকের এমডি হিসেবে এবং চেয়ারম্যান হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের কোন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞকে নিয়োগ দেয়া। এক মাসের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশে তার আগের সেই ভাবমুর্তি ফিরে পাবে।
কোয়ালিটি ছেলেগুলোকে তাদের কাজ দেখে এগিয়ে আনতে হবে। আর অধিকাংশ অফিসারের সমস্যা হল ইংরেজি ও কম্পিউটার শিক্ষা। এটিকে গুরুত্ব দিতে হবে সাথে প্রমোশন ও পে-স্কেলকে যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে হবে।
নিজের যোগ্যতা প্রমান করুন অফিসে বা ব্যাংকে গিয়ে, ব্লগিং করে ভালো কিছু আসবে না।
যারা এতদিন এই ব্যাংককে এত দূর আনলো তাদের এক তূরী মেরে উড়িয়ে দিলেন, বিদেশী দেখালেন ভাই থামেন নয় তো আপিনার পরিচয় বের করে উত্তম মধ্যম দেওয়া হবে।
অযথা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করবেন না
উল্টো আপনারই ক্যারিয়ারের ক্ষতি হবে
সালমান শামিলকে দূর্নীতির অপরাধে ব্যাংক থেকে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে