কারা করছে খুনগুলো। কারা নাড়ছে কলকাঠি? কার লাভ হচ্ছে একটা একটা ব্লগার বলিতে। একটা একটা করে সম্ভাব্য খুনী লিস্টে ভরছি। যোগ-বিয়োগ করছি, হিসাব মিলছেনা অনেককিছুরই।
১। জামায়াত-শিবির – বাংলাদেশের সবচেয়ে সহজলভ্য অপরাধী এখন। কিন্তু একটা বোকাও বুঝতে পারবে এই খুনগুলো করে ভয়াবহ ক্ষতি বৈ এদের কোন লাভ নেই। ক্ষমতায় আসার জন্য যেখানে এরা আমেরিকার সাহায্য প্রত্যাশী, সেখানে এইধরনের কাজ করে চিরদিনের জন্য সেপথ বন্ধ কখনই করবেনা। এছাড়াও এরা একসময় ক্ষমতায় ছিল, তখনও এই নাস্তিকরা বহাল তবিয়তে এদেশে বাস করেছে।
২। আনসার উল্লাহ/আইসিস/ধর্মীয় উগ্রপন্থী কোন দল – আইসিস নিজেই এখন নানাদিক দিয়ে চাপের মুখে আছে। এরা আদৌ কাদের তৈরী তা নিয়েই নানা কথা উঠছে। আর ধর্মীয় কোন উগ্রপন্থারই যদি কাজ হয়, তাহলে এরা কি এই ব্লগার ছাড়া আর কাউকে দেখেনা? আজকাল ধর্মের বিরুদ্ধে উল্টাপাল্টা কথা অনেক ক্ষমতাশীন বা তাদের সমর্থকরাই বলছে। ধরুন আইবিইএটির ভিসির কথাই, ধর্মীয় পোশাক পড়ার কারণে লেখাপড়া পর্যন্ত করতে দিচ্ছেনা মুসলিম ছেলেদের, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সবার সামনে হিজাব খুলে হিউমিলিয়েট করেছে একটা বোনকে, পুলিশরা নানাভাবে লাঞ্চিত করছে ধর্মপরায়নদের, শুনলে সাধারণ মুসলমানদেরই রক্ত গরম হয়ে যায়, কিন্তু একজনের গায়েও ফুলের টোকাও লাগছেনা। এদের টার্গেটতো ওরাই আগে হওয়ার কথা ছিল, তাইনা?
৩। সরকার–সরকারের দিকে অনেকেই আঙ্গুল তুলছে, এমনকি শাহবাগী-নাস্তিকরাও। সম্প্রতি ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য পশ্চিমাদেরকে দেশে জঙ্গি উত্থানের ব্যাপারে কনভিন্স করানোর প্রানান্তকর চেষ্টা এই ধারনাটাকে অনেকটা বদ্ধমুল করেছে। কিন্তু এই সরকার যে আর যাইহোক ইসলাম বান্ধব নয়, এখন এটা মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত। জনগণকে নিজেদের ইসলামপ্রীতির ডেমোনস্ট্রেশন দিতে বড়জোড় এরা দুএকটা ব্লগার আটক করে মিডিয়ায় হৈ চৈ করতে পারে (করেছেও কয়েকজনকে কিন্তু নীরবে ছেড়েও দিয়েছে)। এভাবে রাতের অন্ধকারে খুনে এদের তেমন লাভ কি আছে যেখানে সবাই এখন নিশ্চিত জামাত শিবিরের কাজ এগুলো নয়। এও সত্য এদের পক্ষে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য সব সম্ভব, এমনকি নিজের দলের কয়েকটাকে বলি দেয়া পর্যন্ত। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল খেলতে না আসার ঘটনা ও জঙ্গি উত্থানের ব্যাপারে আমেরিকার সাবধানবাণীর পর সরকার বরং বিশ্বকে কনভিন্সড করতে চাচ্ছে দেশে জঙ্গি/আইসিস নাই। এছাড়াও একবার রেপুটেশন হয়ে গেলে দেশের বৈদেশিক বিনিয়োগের বারোটা বাজবে, দুর্নীতিপরায়ন সরকারী দল ব্যাপারটাকে এতদুর যেতে দিবে কি? কপর্দকশূণ্য একটা দেশের ক্ষমতায় থেকেই লাভ কি?
৪। ভারত–এই অপশনটা আমার বেশ পসিবল মনে হচ্ছে। ভারতে এখনে ধর্মীয় উগ্রপন্থী হিন্দু দল ক্ষমতায়, এরা ধর্মীয় দাঙ্গায় হাজার হাজার সাধারণ জনতাকে খুন করেছে। অভিজিতের মত নাস্তিক ব্লগাররা শুধু ইসলাম ধর্ম নিয়েই ব্যঙ্গ করেনা, হিন্দু ধর্ম নিয়েও করে। তার উপর বাংলাদেশে জঙ্গি উত্থানের বিষয়টি বিশ্বকে বিশ্বাস করানো গেলে বাংলাদেশে এদের আধিপত্য বাড়বে এবং সেই সাথে বহু বিদেশী বিনিয়োগ/ব্যবসা ভারতে চলে যাবে। আমরা অলরেডি জানি ‘র’ (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা) বাংলাদেশে ছেয়ে গেছে, সুতরাং এরকম দিনদুপুরে প্রমাণবিহীন হত্যা করে যাওয়া কোন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিদেশী চরের পক্ষে সম্ভব।
৫। আমেরিকা–আইসিসের বা জঙ্গিবাদের উত্থান দেখিয়ে আরেকটি মুসলিম রাস্ট্রের উপর নজরদারি, ইন্টারফেয়ারেন্স জায়েজ করার চাল হতে পারে। কিন্তু সেগুলো করার জন্য আমেরিকাকে অত চাল চালতে হবে বলে মনে হবেনা, যেখানে পুরো দেশ তাদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে। আমেরিকার তেমন কিছু পাওয়ার নেই বলেই মনে হয় বাংলাদেশ থেকে যা তারা এমনি চাইলেই পাচ্ছেনা।তবে আমেরিকা সরাসরি বাংলাদেশের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে গেলেই ভারতীয় স্বার্থে লাগবে।ভারতের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক এখন বেশ ভাল, বাংলাদেশের মত ছোট একটি দেশের জন্য বিশাল ভারতের সাথে সম্পর্ক খারাপ করার কোন লজিকাল কারন নেই।
প্রশ্নটা থেকেই যায়, কোপাইতেছে কে? দেশের এই ক্রান্তিকালে প্রশ্নটা জানা বড় প্রয়োজন। এই খুন সেই খুন যারাই করছে, আওয়ামী লীগ বুঝে হোক না বুঝে হোক, দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। শাহবাগীরা দেশের মানুষের মধ্যকার বিভক্তির শিকড় অনেক গভীরে নিয়ে গেছে, যেই গাছ আর উপড়ানো সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় দেশটাকে বাঁচাতে চাইলে জানা প্রয়োজন, আসলেই সুবিধামত কোপাইতেছে কে?