‘ইসলাম’ এর অর্থ কমবেশী সবার জানা। পারিভাষিক অর্থে ইসলাম হলো পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, ইংরেজীতে যাকে বলে System of life অর্থাৎ,জীবন পদ্ধতি বা জীবন ব্যবস্থা। সাধারনতঃ একজন মানুষের জীবন থেকে মৃর্ত্যু পর্যন্ত মধ্যবর্তি সময়টাকে (life -জীবন-হায়াত)বলে জানি। মানুষ সামাজিক জীব ” Man cannot live alone” তাই মানুষের প্রয়োজনের তাগিদে সংঘবদ্ধভাবে বসবাসের ফলেই ”সমাজের সৃষ্টি হয়। সমাজ বিজ্ঞানী Gisbert বলেন – ”সমাজ হলো সামাজিক সম্পর্কের জটিল জাল, যা পারস্পরিক সম্পর্ক দ্বারা প্রত্যেক মানুষ তার সঙ্গীদের সাথে সম্পর্কযুক্ত” তাই সমাজে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়, প্রয়োজন অনুভূত হয় একটি সিস্টেম বা পদ্ধতির, যার মাধ্যমে মানুষেরা, তাদের জীবন বা হায়াতে জিন্দেগী পরিচালিত করবে। এই সিস্টেমের রূপরেখা সম্বলিত প্রেসক্রিপশণকেই জীবন ব্যবস্থা বলে।
বস্তুতান্ত্রিক আইডলজিতে Re-birth বলতে কোন কিছুকে স্বীকার করা হয়না। বলা হয় এই দৃশ্যপটে যা কিছু আছে তাহাই সত্য। এই জীবন ও জগত প্রকৃতির দান।তবে বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গীর উপর ভিত্তি করে যত ইজম প্রচার করা হয়েছে তার সব কটিতেই ন্যাচারাল পাওয়ার নামে একটি সত্বা শক্তিকে স্বীকার করা হয়েছে। আধুনিক দর্শণ প্রমান করেছে এই ন্যাচারাল পাওয়ার, আর কিছু নয় একজন সুনির্দিষ্ট প্রডিউসার এর ইঙ্গিত বহন করে।এই প্রডিউসার আর কেহ নহেন তিনিই হচ্ছেন এই বিশ্ব জগতের একমাত্র সৃষ্টি কর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন।
মানুষেরা জাগতিক জীবনকে পরিচালনার উদ্দেশ্যে দুইবার দুই ধরনের জীবন ব্যবস্থার কথা চিন্তা করেছেন। মানুষের প্রথমবারের চিন্তা চেতনা ধ্যান ধারনা ছিল আধ্যাত্মবাদের উপর ভিত্তি করে|| তাদের দীর্ঘদিনের আরাধনায়, তাদের মানস বোধে যে সকল সুষ্ঠ সুন্দর কল্যাণকর চিন্তাধারা জাগ্রত হয়েছে তা তারা মানবজাতির হায়াতী জিন্দেগীতে মানুষের জীবনের জন্য উত্তম পদ্ধতি মনে করেছে তাই হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, এসব আদি লৌকিক ধর্মের কথা বললাম, এছারাও আছে যীশুর খ্রীষ্ঠীয় বা খ্রীষ্ঠান ধর্ম, ইহুদী ধর্ম, আবার এদের মধ্যে প্রচলিত প্রায় ৪০ চল্লিশ রকমের বাইবেল অনুসারী, যারা আল্লাহ প্রেরীত বার্তাবাহকদের কারো না কারো অনুসারী। অর্থাৎ আসমানী কিতাবের অনুসারী, আর ইসলাম হলো আল্লাহ প্রেরীত শেষ আসমানী কিতাব ও মুহাম্মদ সাঃ এর অনুসারী আল কুরআনের অনুসারী মুসলিম জনগোষ্ঠীদের বিশ্বাস।
এ ছাড়াও আরো বহুরকমের আধ্যাত্মিক ধর্মের অনুসারী রয়েছেন, তার নাম বলতে গেলে অনেক সময় লেগে যাবে, এত রকমের ধর্মীয় মতবাদ জন্মলাভ করে। কিন্তু এতসব ধর্মের প্রচলন থাকার পরও মানজাতির সাময়িক কল্যাণ বয়ে আনতে পারলেও দীর্ঘকায় ধরে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।কেন পারেনি সেটা এখন খুটিয়ে দেখা উচিত।একেবারে কিছুই করতে পারেনী বললে ভুল হবে, কেননা এসব বিষয় আল্লাহর নির্দেশ কিছুকাল মানলেও নতুন সামাজিক প্রয়োজনে এগুলো হয়ে পড়ে যুগ বা সময়ের সাথে বেমানান।
কোন কোন ধর্ম যখন সমাজের কাঠামোতে প্রবেশ করে তখন অসাড় প্রমানিত হয়। যেমন; যখন থেকে মানুষ সংস্কার প্রয়োজন মনে করেছে ধর্মের মৌলিক কিছু বিষয় ঠিক রেখে বাকি সব কিছু নিজের প্রয়োজনে সংযোজন করে এতে বিভিন্ন আসমানী কিতাবের অনুসারিরা তাকে বিকৃত করে ফেলে তা মানব জীবনের সার্বিক কল্যাণ সাধন করতে ব্যর্থতায় পর্যবেশিত হয়, মহান স্রষ্ঠার অমোঘ নিয়মেই।গীর্জাতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা যাজকতন্ত্রের শোষনের হাতকেই শক্তিশালী করেছে, এ ছিল খ্রীষ্ঠবাদের কথা।
অপরদিকে লৌকিক বা সনাতন ধর্ম হিসাবে হিন্দু ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতায় জাতি বৈষম্য, বিদ্ধেষ, বর্ণ বৈষম্য মারাত্মক আকার ধারন করে সমাজের ব্যাধি হিসাবে আত্মপ্রকাশ লাভ করে। এই ব্যাধি সমাজকে আকড়ে ধরে, যাতে করে সমাজের সার্বিক বিকাশ ব্যাহত হয়। আধুনিক পশ্চিমী সভ্যতা গীর্জা পরিচালিত কলুষিত যাজকতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি প্রকাশ্য বিদ্রোহ। মানব পরিচালিত বিশেষ জ্ঞানের আলোয় গীর্জার আলো ফিকে হয়ে আসতে থাকে। বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর থিওরী অফ দ্যা ইউনিভার্স থেকে যখন ঘোষিত হয় যে ”পৃথিবী” সূর্যের চারিদিকে ঘুড়ে তখন যাজকদের গাত্রদাহের সৃষ্ঠি করে যাতে করে গ্যালিলিও এর মতো লোকদেরকেও পলাতক ফেরারী জীবনে চলে যেতে হয় তার খোজ আজ অবধি অজ্ঞাত রয়ে গেছে, তখন বিশেষ জ্ঞানের প্রসারে যাজকতন্ত্র কোনঠাসা হয়ে পরে।
ধর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদীরা প্রকাশ্য বিদ্রোহ করে ধর্মের বিরুদ্ধে সমালোচনার স্তুপ তৈরী করল। সবচাইতে বহুল আলোচিত যে অপবাদটি তাহলো ”ধর্ম অসহনশীলতার জন্ম দেয়, মানুষের বর্বর অতীতের ধ্বংসাবশেষ হলো ধর্ম, গোড়ামী এবং ধর্ম পরস্পর হাত ধরাধরি করে চলে, ধর্ম যুদ্ধ সমূহে মানব রক্তের শ্রোত বয়ে গেছে, ধর্মাধিকারীরা রাজনৈতিক স্বাধীনতার কন্ঠে ছুড়ি চালিয়েছে, ধর্মীয় রাষ্ট্রে বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতা বা মুক্তবুদ্ধির চর্চার কোন স্থান নেই, ধর্ম ও বিজ্ঞান পরস্পরের মধ্যে দা-কুড়াল সম্পর্ক এবং যে কেউ এ দুটির মধ্যে যে কোন একটির সাথে সম্পর্ক রাখতে পারে, এক সঙ্গে দুটির সাথে নয়”।
মূলত এ সমস্ত অভিযোগের সৃষ্টি হয় খ্রীষ্ট ধর্মের বিরুদ্ধে, কারন খ্রীষ্ট্রীয় যাজকতন্ত্র ইহুদী সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করেছিল এবং মানুষের চিন্তার স্বাধীনতাকে করেছিল শৃংখলিত।বিজ্ঞান ও খ্রীষ্ট ধর্মের মধ্যকার যে সংঘর্ষ তা ছিলো রক্তক্ষয়ী, গীর্জার সাথে দ্বিমত পোষণ করার অপরাধে মানুষকে মৃত্যু মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছিল।জন উইলিয়াম ড্র্যাপার” তার ” A History of the Intellectual Development of Europe Volume- 1 (London 1891) গ্রন্থে দাবী করেছেন 1481 খ্রীষ্ঠাব্দ থেকে 1808 খ্রীষ্ঠাব্দ পর্যন্ত পরিচালিত তদন্ত অভিযানে তিন লক্ষ চল্লিশ হাজার মানুষকে শাস্তি দেয়া হয়েছিল, এর মধ্যে 32 হাজার মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল ” মধ্যযুগে ধর্ম নিয়ে রক্তক্ষয়ী দন্ধ সংঘাত সংঘর্ষের ফলে ইউরোপে ধর্ম আর রাষ্ট্র সম্পূর্ণভাবে পৃথক হয়ে গেছে।মধ্যযুগে খ্রীষ্ঠান সম্প্রদায়ের সংঘটিত যুদ্ধ অপরিসীম রক্তপাত ও ধ্বংসের কারণ হয়েছে এবং তা পিছনে ফেলে গেছে চরম নৈরাশ্য আর ধর্ম বিরুধী মনোভাব বা বিক্ষোভ।
ইসলামী আন্দোলন
এই বিষয়ের শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ আলোচনার দাবী রাখে। অনেকেই এই সম্পর্কে সঠিক ধারনা রাখেননা। এই ধারনা না রাখা সত্বেও বিষয় গুলো বার বার প্রাসঙ্গিক ভাবে সামনে আসছে, আর জানা-না জানা সকলেই মনের মাধুরী মিশিয়ে কেউ পক্ষে লিখছেন আর কেউ বিরুদ্ধে লিখছেন, একথা আমার ব্যাপারেও একথা সত্য।এ বিষয়ে একটি তথ্যবহুল লেখা প্রকাশের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আমার মনে বার বার নাড়া দিচ্ছে। তাই শুধু সঠিক পদক্ষেপ কি, ইসলামপন্থিদের কি করা উচিত হবে এই বিষয়ের মধ্যে আমার লেখাটা সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করবো, ওয়ামা তৌফিকি ইল্লাহ বিল্লাহ।
আন্দোলন একটি বাংলা শব্দ এ শব্দটি দোলন শব্দ থেকে এসেছে, দোলন শব্দের অর্থ হলো নড়াচড়া করা, একটি বস্তু সরিয় অন্য একটি বস্তু প্রতিস্থাপন করাকে ”আন্দোলন” বলা হয়, তাহলে ”ইসলামী আন্দোলন” মানে দুনিয়ার সকল বিষয়ে অন্য যে বিষয়বস্তু প্রতিস্থাপিত অবস্থায় রয়েছে তা সরিয়ে সেখানে ইসলাম প্রতিস্থাপন করার নামই বলা যায় ”ইসলামী আন্দোলন”।
প্রাসঙ্গিকভাবেই চলে আসে মুজাদ্দিদ বা সংস্কারকদের কথা। ইসলাম ধর্মমতে জিবরাইল আঃ আর কোন অহি নিয়ে আসবেনা, তাই বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন অঞ্চল ভিত্তিক যুগসংস্কার পৃথিবীতে এসেছেন এবং অবিকৃত কোরআনের যুগোপযুগি ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। আরেকটা কথা এব্যপারে না বললেই নয়, সেটা হলো কোন লোক নিজে দাবী করবেনা সে মুজাদ্দিদ। তার কর্মকান্ড বিবেচনা করে তার জীবদ্দশায় অথবা তার ইন্তেকালের পর মুসলিম জাতি স্বীকার করবে যে ঐ লোকটা মুজাদ্দিদ ছিলো। দেখা যাবে তাঁর দেখানো পথ মানুষ অনুস্মরণ করবে, তবে তাদের প্রচেষ্টা শুধু ইসলামের জন্যই হবে। ইসলাহ করে তিনি ইসলামের সঠিক বিধান সমাজে কায়েম করবেন বা মানুষকে এটা করার জন্য ঐক্যবদ্ধ করবেন। ঐক্যবদ্ধ এই কাজ করার প্রচেষ্টাকেই ইসলামী আন্দোলন বলে।
বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি
আব্বাসীয় খিলাফতের স্বর্ণ যুগ তৈরী করেছিলেন খলীফা হারুন অর রশিদ। জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে ইউরোপের স্পেন নগরীতেও ইসলামের বিরাট বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের ধারা প্রচলিত হয়। খলীফা হারুন অর রশিদের পর খিলাফতের জ্ঞানের আলোক বর্তিকা সহ আবির্ভূত হন খলিফা আল মামুন। তার সময়ে স্পেনের রাজধানী ছিল ”কর্ডোভা” নগরী।খলীফা যে বিজ্ঞানাগার ও মান মন্দির সমূহ নির্মান করেছিলেন তাহা আজও জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎস হিসাবে মানা হয়। ক্রুসেডে মুসলিমরা যখন পরে পরাজিত হয় তখন বিজয়ী শক্তি বুজতেও পারেনাই এগুলো কি। অথচ তখন খলীফা আল-মামুনের গড়া এবং বিভিন্ন স্থান থেকে কালেকশণ করা বিজ্ঞানের অনেক থিওরীর সূতিকাগার ছিল সেই বিজ্ঞানাগারগুলো, যা আধুনিক বিজ্ঞানে অনেক কিছু সহজ করে দিয়েছে।বড় বড় অনেক কিছুই মুসলিম বিজ্ঞানীগন আবিষ্কার করেন বা করতে পেরেছিলেন।
যা হউক, বিশ্ব পরিক্রমায় ইসলাম বিরোধী শক্তি বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে, গোয়েবলসীয় কায়দায় ইসলামের বিরোদ্ধে মিথ্যাচার করতে করতে ইসলামের অর্থই পাল্টে ফেলেছেন।গীর্জাতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিরোদ্ধে যা বলা হয়েছিল তাহা ইসলামের বিরোদ্ধে চালিয়ে দিয়ে কিছু এজেন্টের মাধ্যমে মুসলিম দেশ গুলোতে অশান্তির দাবানল ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তাতে করে বহু শিক্ষিত মুসলিমও অজান্তে ইসলাম বিরোধীদের সাথে মেল বন্ধন তৈরী করে ফেলেছে। তাদের নিকট বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তাধারার বিপরীত হলো ইসলাম। এই ধারনা ডেভেলপ করায় ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলনের উপর একটা বানানো অপবাদ দিয়ে ইসলামী আন্দোলনকে সমাজের ভিলেন হিসাবে প্রচার করে কোন কোন জায়গায় এই মত প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েও গেছেন।
শ্লোগান হলো ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার, যা খৃষ্ঠীয় বা অন্য যে কোন ধর্ম বা ইজমের ব্যাপারে মেনে নেওয়া যায় কিন্তু ইসলামের পক্ষে মেনে নেওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারেনা। কেননা দুনিয়াতে এমন কোন বিষয় নাই যার সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্য নাই। তাই দেখা যায় শতো বাধা বিপত্তির পরও ইসলামী আন্দোলন কখনো থেমে থাকেনি। বিগত 100/150 বছরের ইতিহাসে ইসলামী আন্দোলন পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে গেছে, বিভিন্ন যুগসস্কারকের আবির্ভাব হয়েছিল। এইসব ইসলামী আন্দোলন যুগে যুগে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। বিভিন্ন যুগসস্কারকদের আদর্শিক প্রভাব যেসব ইসলামী দলে রয়েছে তার একটি আলোচনা এবং এইসব ইসলামী আন্দোলনের বিরোধী কারা, তাদের কুচক্রি কর্মের আঘাতে কিভাবে ইসলামী আন্দোলন ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে বা হয়েছে এবং হবে, তা নিয়েও আলোকপাত করবো পরবর্তি আলোচনায় ইনশাআল্লাহ
(চলবে)
লেখকের সাথে দ্বিমত প্রকাশের অবকাশ নেই | বর্তমানে বাংলাদেশে ইসলাম বিরোধী শক্তি হিসেবে নষ্ট ও ভ্রান্ত রাজনীতি ও রাষ্ট্র ক্ষমতা কুক্ষিগত ও চিরস্থায়ী করনে ইসলামে জঙ্গীবাদের প্রচারনা চালায়,নাস্তিক্যবাদী’দের কেবলমাত্র ইসলাম বিদ্বেষে উৎসাহ যোগায়,সংখ্যালঘুদের উপর গোপন সন্ত্রাস চালিয়ে মুসলিম়’দের গায়ে কালিমা লেপনের অপপ্রয়াস চালায় | ইসলাম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে কৌশলে একে অন্যের শত্রু বানিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করে ইসলামী শক্তিকে একত্রীভূত হতে দেয়না | এমনি ভাবে আন্ত্রজাতিক ইহুদীপৌত্তলিকচক্র শিয়া সুন্নি বিভেদ’কে উস্কে দিয়ে অস্ত্র দিয়ে রক্তের নেশায় মাতিয়ে দিয়েছে |
আজিজুর রহমান সাহেব আমার লেখাটার সারসংক্ষেপ সহ তুলে ধরে এত প্রাঞ্জল ভাষায় কমেন্টটি করেছেন, তার জন্য আমি শুকরিয়া ও মোবারকবাদ জানাই
কুরানের কয়েকটি আয়াত ও সঠিক ব্যাখ্য্http://www.somewhereinblog.net/blog/ador2001/30075160
ইসলামী আন্দোলন এবং বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি
”দ্বিতীয় ভাগ”
লৌকিক বা সনাতন ধর্ম হিসাবে হিন্দু ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতায় জাতি বৈষম্য, বিদ্ধেষ, বর্ণ বৈষম্য মারাত্মক আকার ধারন করে সমাজের ব্যাধি হিসাবে আত্মপ্রকাশ লাভ করে || এই ব্যাধি সমাজকে আকড়ে ধরে, যাতে করে সমাজের সার্বিক বিকাশ ব্যাহত হয় || আধুনিক পশ্চিমী সভ্যতা গীর্জা পরিচালিত কলুষিত যাজকতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি প্রকাশ্য বিদ্রোহ || মানব পরিচালিত বিশেষ জ্ঞানের আলোয় গীর্জার আলো ফিকে হয়ে আসতে থাকে || বিজ্ঞানী আইনষ্টাইনের থিওরী অফ দ্যা ইউনিভার্স থেকে যখন ঘোষিত হয় যে ”পৃথিবী” সূর্যের চারিদিকে ঘুড়ে তখন যাজকদের গাত্রদাহের সৃষ্ঠি করে যাতে করে আইনাষ্টাইন এর মতো লোকদেরকেও পলাতক ফেরারী জীবনে চলে যেতে হয় তার খোজ আজ অবধি অজ্ঞাত রয়ে গেছে, তখন বিশেষ জ্ঞানের প্রসারে যাজকতন্ত্র কোনঠাসা হয়ে পরে || ধর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদীরা প্রকাশ্য বিদ্রোহ করে ধর্মের বিরুদ্ধে সমালোচনার স্তুপ তৈরী করা হল যার বিরাট এবং বিপুল ||
তবে সবচাইতে বহুল আলোচিত যে অপবাদটি তাহলো :
”ধর্ম অসহনশীলতার জন্ম দেয়, মানুষের বর্বর অতীতের ধ্বংসাবশেষ হলো ধর্ম, গোড়ামী এবং ধর্ম পরস্পর হাত ধরাধরি করে চলে, ধর্ম যুদ্ধ সমূহে মানব রক্তের শ্রোত বয়ে গেছে, ধর্মাধিকারীরা রাজনৈতিক স্বাধীনতার কন্ঠে ছুড়ি চালিয়েছে, ধর্মীয় রাষ্ট্রে বুদ্ধি ভিত্তিক স্বাধীনতা বা মুক্তবুদ্ধির চর্চার কোন স্থান নেই, ধর্ম ও বিজ্ঞান পরস্পরের মধ্যে দা-কুড়াল সম্পর্ক এবং যে কেউ এ দুটির মধ্যে যে কোন একটির সাথে সম্পর্ক রাখতে পারে, এক সঙ্গে দুটির সাথে নয় || মূলত এ সমস্ত অভিযোগ সৃষ্ঠি হয় খ্রীষ্ঠ ধর্মের বিরুদ্ধে, কারন খ্রীষ্ঠীয় যাজকতন্ত্র ইহুদী সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হত্যাযগ্য পরিচালনা করেছিল এবং মানুষের চিন্তার স্বাধীনতাকে করেছিল শৃংখলিত || বিজ্ঞান ও খ্রীষ্ঠ ধর্মের মধ্যকার যে সংঘর্ষ তা ছিলো রক্তক্ষয়ী, গীর্জার সাথে দ্বিমত পোষণ করার অপরাধে মানুষকে মৃর্ত্যুমুখে ঠেলে দেয়া হয়েছিল || জন উইলিয়াম ড্র্যাপার” তার
” A History of the Intellectual Development of Europe Volume- 1 (London 1891) গ্রন্থে দাবী করেছেন
1481 খ্রীষ্ঠাব্দ থেকে 1808 খ্রীষ্ঠাব্দ পর্যন্ত পরিচালিত তদন্ত অভিযানে তিন লক্ষ চল্লিশ হাজার মানুষকে শাস্তি দেয়া হয়েছিল, এর মধ্যে 32 হাজার মাুষকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল ” মধ্যযুগে ধর্ম নিয়ে রক্তক্ষয়ী দন্ধ সংঘাত সংঘর্ষের ফলে ইউরোপে ধর্ম আর রাষ্ট্র সম্পূর্ণভাবে পৃথক হয়ে গেছে || মধ্যযুগে খ্রীষ্ঠান সম্প্রদায়ের সংঘটিত যুদ্ধ অপরিসীম রক্তপাত ও ধ্বংসের কারণ হয়েছে এবং তা পিছনে ফেলে গেছে চরম নৈরাশ্য আর ধর্ম বিরুধী মনোভাব বা বিক্ষোভ ||
”’ তৃতীয় ভাগ”’
আন্দোলন একটি বাংলা শব্দ এ শব্দটি দোলন শব্দ থেকে এসেছে, দোলন শব্দের অর্থ হলো নড়াচড়া করা, একটি বস্তু সরিয় অন্য একটি বস্তু প্রতিস্থাপন করাকে ”আন্দোলন” বলা হয়, তাহলে ” ”ইসলামী আন্দোলন” মানে দুনিয়ার সকল বিষয়ে অন্য যে বিষয়বস্তু প্রতিস্থাপিত অবস্থায় রয়েছে তা সরিয়ে সেখানে ইসলাম প্রতিস্থাপন করার নামই বলা যায় ”ইসলামী আন্দোলন” ||
এই ইসলামী আন্দোলন যুগে যুগে ছিল ও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে,
@#মুজাদ্দিদ
প্রাসঙ্গিকভাবেই চলে আসবে মুজাদ্দিদ বা সংস্কারকদের কথা, ইসলাম ধর্মমতে জিবরাইল আঃ আর কোন অহি নিয়ে আসবেনা, তাই বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন অঞ্চল ভিত্তিক যুগসংস্কার পৃথিবীতে এসেছেন এবং অবিকৃত কোরআনের যুগোপযুগি ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন, আরেকটা কথা এব্যপারে না বললেই নয়, সেটা হলো কোন লোক নিজে দাবী করবেনা সে মুজাদ্দিদ, তার কর্মকান্ড বিবেচনা করে তার জীবদ্দশায় অথবা তার ইন্তেকালের পর মুসলিম জাতি স্বীকার করবে যে ঐ লোকটা মুজাদ্দিদ ছিলো, দেখা যাবে তাঁর দেখানো পথ মানুষ অনুস্মরণ করবে, তবে তাদের প্রচেষ্টা শুধু ইসলামের জন্যই হবে, ইসলাহ করে তিনি ইসলামের সঠিক বিধান সমাজে কায়েম করবে বা মানুষকে এটা করার জন্য ঐক্যবদ্ধ করবেন||
@#বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি
আব্বাসীয় খিলাফতের স্বর্ণ যুগ তৈরী করেছিলেন খলীফা হারুন অর রশিদ, জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে ইউরোপের স্পেন নগরীতেও ইসলামের বিরাট বুদ্ধিভিত্তিক বিকাশের ধারা প্রচলিত হয়, খলীফা হারুন অর রশিদের পর খিলাফতের জ্ঞানের আলোক বর্তিকা সহ আবির্ভূত হন খলিফা আল মামুন, তার সময়ে স্পেনের রাজধানী ছিল ”কর্ডোভা” নগরী, খলীফা যে বিজ্ঞানাগার ও মান মন্দির সমূহ নির্মান করেছিলেন তাহা আজও জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎস হিসাবে মানা হয়, ক্রুসেডে মুসলিমরা যখন পরে পরাজিত হয় তখন বিজয়ী শক্তি বুজতেও পারেনাই এগুলো কি, অথচ তখন খলীফা আল- মামুনের গড়া এবং বিভিন্ন স্থান থেকে কালেকশণ করা বিজ্ঞানের অনেক থিওরীর সূতিকাগার ছিল সেই বিজ্ঞানাগারগুলো, যা আধুনিক বিজ্ঞানে অনেক কিছু সহজ হয়ে গিয়েছে, বড় বড় অনেক কিছুই মুসলিম বিজ্ঞানী বিজ্ঞানের অনেক কিছুর আবিষ্কার করেন বা করতে পেরেছিলেন ||
যাহউক বিশ্ব কার্য্যপরিক্রমায় ইসলাম বিরোধী শক্তি বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে, গোয়েবলসীয় কায়দায় ইসলামের বিরোদ্ধে মিথ্যাচার করতে করতে ইসলামের অর্থই পাল্টে ফেলেছেন, গীর্জাতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিরোদ্ধে যা বলা হয়েছিল তাহা ইসলামের বিরোদ্ধে চালিয়ে দিয়ে কিছু এজেন্টের মাধ্যমে মুসলিম দেশ গুলোতে অশান্তির দাবানল ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তাতে করে বহু শিক্ষিত মুসলিমও অজান্তে ইসলাম বিরোধীদের সাথে মেল বন্ধন তৈরী করে ফেলেছে, তাদের নিকট বুদ্ধিভিত্তিক চিন্তাধারার বিপরীত হলো ইসলাম, এই ধারনা ডেভেলপ করায় ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলনের উপর একটা বানানো অপবাদ দিয়ে ইসলামী আন্দোলনকে সমাজের ভিলেন হিসাবে প্রচার করে কোন কোন জায়গায় এই মত প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েও গেছেন, শ্লোগান হলো ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার, যা খৃষ্ঠীয় বা অন্য যে কোন ধর্ম বা ইজমের ব্যাপারে মেনে নেওয়া যায় কিন্তু ইসলামের পক্ষে মেনে নেওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারেনা, কেননা দুনিয়াতে এমন কোন বিষয় নাই যা সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্য নাই, তাই দেখা যায় শতো বাধা বিপত্তির পরও ইসলামী আন্দোলন কখনো থেমে থাকেনি, ইদানিং বলতে বিগত 100/150 বছরের ইতিহাসে ইসলামী আন্দোলন পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন যুগসস্কারকের আবির্ভাব হয়েছিল, তাদের আদর্শিক প্রভাব যেসব ইসলামী দলে রয়েছে তার একটি আলোচনা এবং এইসব ইসলামী আন্দোলনের বিরোধী কারা, তাদের কুচক্রি কর্মের আঘাতে কিভাবে ইসলামী আন্দোলন কিভাবে ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে বা হয়েছে এবং হবে, তা নিয়েও আলোকপাত করবো, পরবর্তি আলোচনার চতুর্থ অংশে ||
(চলবে)
” সর্বাত্মক রাষ্ট্রপন্থা এবং প্রাসঙ্গিক ভাবনা”
এড. মোঃ সলীমুল্লাহ খান
rosegarden.khan@gmail.co
বিশেষ ধামা দিয়ে চাপা দেয়া দু’টি ঐতিহাসিক সত্য এ সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে। এই পরম সত্যের একটি বলেছেন
সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় পার্টির প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
অন্যটি বলেছেন
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
এরশাদ শেষমেশ স্বীকার করে ফেলেছেন যে, তার কোনো ছেলেসন্তান নেই! ১৯৮২ সালে বন্দুকের নল দেখিয়ে ক্ষমতা দখল করে এ দেশের বাদশাহ বনে যান তিনি। তারপর @#আঁটকুড়ে বাদশাহর অপবাদ ঘুচাতে সুস্থ সবল ও বয়স্কা স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে সন্তান জন্মদানের নাটক সাজান। পুরো ঘটনাটিই ছিল একটি মহাপ্রতারণা। তজ্জন্য শিল্পী কামরুল হাসান তাকে যে বিশ্ববেহায়া উপাধি দিয়েছিলেন, তার যথার্থতায় অনেকে আস্থা আনবেন। তার পরম অনুগত ও ব্যক্তিত্বহীন সেই স্ত্রীই হয়েছেন আজ বিরোধীদলীয় নেত্রী। ছাই ফেলতে যেন ভাঙা কুলাই ব্যবহৃত হয়েছে।
অন্য দিকে বাংলাদেশের ২১তম বিচারপতি তার দায়িত্ব গ্রহণের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বাণীতে বলেন, ‘কোনো কোনো বিচারপতি রায় লিখতে অস্বাভাবিক বিলম্ব করেন। আবার কেউ কেউ অবসর গ্রহণের দীর্ঘ দিন পর পর্যন্ত রায় লেখা অব্যাহত রাখেন, যা আইন ও সংবিধানপরিপন্থী
দেশ ও জাতির স্বার্থে তাই জাতিসঙ্ঘের তত্বাবধানে সামনের পাঁচটি সাধারণ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছন অনেকেই।
যারা এই জাতির প্রকৃত মঙ্গল চান ও জাতির বিবেক হিসেবে গণ্য তাদেরকে বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখার অনুরোধ করছি। সরকার যতই ছলচাতুরী করুক না কেন, তাদেরকে এই বাঘের পিঠ থেকে একদিন না একদিন নামতেই হবে। সেই নামার কাজটি যত তাড়াতাড়ি হবে, ততই তাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে। জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে এবং আমাদের সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। বিশেষ করে বর্তমান সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল ও টিকে থাকতে গিয়ে সমাজের পেশিশক্তির ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এরা জনগণের ওপর যে নির্যাতন করেছে, তাতে এদের ওপর জনগণের প্রচণ্ড ক্ষোভ জমা হয়েছে। কাজেই এই ক্ষোভ ও আক্রোশ থেকে বাঁচাতেও জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে এবং আমাদের সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া দরকার।
আমি সাংগাতিক ভাবে ঐক্যমত প্রকাশ করে উনার লেখাকে সমর্থন ঘোষণার সাথে আমি আরো কিছু যোগ করবো যা আমি আমার অন্য লেখায় পরামর্শ হিসাবে লিখেছিলাম, তাহলো নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তমানের কথা, যা খুবই সুন্দর একটি কথা,
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাপ্রণালির নব-অভিষিক্ত রাজধর্মের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’। বর্তমান সরকারের ও সরকারি পার্টিজানদের এই ‘চেতনাবাদী’ রাজনীতিকে গালাগালি করতে দেখি অনেককেই। কিন্তু সত্যিকারের চেতনাবিরোধী তো আমি দেখি না, কই? কেউ ‘মুুক্তিযুদ্ধের চেতনা’, কেউ ‘ইসলামি চেতনা’, কেউ ‘সমাজতান্ত্রিক শ্রেণীচেতনা’। ড্যাশ। ড্যাশ। ড্যাশ।
‘চেতনা’র মাজেজা প্রাচীন, তবু তা বুঝতে যদি কারও বর্তমান স্বৈরতন্ত্রী সরকারকে দেখা পর্যন্ত সময় লেগে গিয়ে থাকে, তো এই সুযোগে গোড়ায় মন দিন। সমস্যা খোদ ‘চেতনা’ বা ‘মতাদর্শ’ নামের জিনিসটা নিয়ে। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ বা বিশেষ কোনো চেতনা নিয়ে নয়। এই ‘চেতনা’ আসলে আপনার-আমার মস্তিষ্কের নিজস্ব চেতনাপ্রণালিগত কিছু নয়। এটা হচ্ছে রাজ-চেতনা। এই চেতনাই সব অচেতনার গোড়া। গোড়ার এই কথাটুকু বুঝে না থাকলে লাভ কী হবে? কালকে অন্য চেতনাধারীরা আসবেন। তারা আপনার পছন্দের চেতনারও লোক হতে পারেন। তাদের কারণে আপনি বৈষয়িকভাবে লাভবানও হতে পারেন। কিন্তু তারাও আপনাকে পার্টির বা অন্য নামের অন্য কোনো দেবতার পা চাটতে বলবেন। আপনার নিজের কথা আপনাকে বলতে দেবেন না। আপনার আত্মসম্মান বলতে কিছু থাকবে না। আপনাকে বাঁধা-বুলি বানানো হয়েছে আর কাউকে কাউকে বুলবুলি হতে হবে। ‘বলবে সবাই সেলাম করে, বুলবুলিটা রাজার লোক’। অন্যের চেতনানাশ করাই রাজচেতনার কাজ।
মুক্তিযুদ্ধের কপিরাইট কোনো রাজকীয় পার্টির নামে দেওয়া নয়। একাত্তরের আওয়ামী লীগ ‘আওয়ামী’ই ছিল জনসাধারণের সংগঠন ছিল রাজকীয় কোনো পার্টি নয়। আর, কোনো পার্টির কোনো প্রকার অভিভাবকত্বহীনতায় সমুদ্র শুকায় না। মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গোপসাগরের চেয়ে বড়।
‘স্বৈরতন্ত্র খারাপ’ ‘স্বৈরতন্ত্র খারাপ’ বলে চিল্লালেই সর্বোৎকৃষ্ট কাজ করা হয় না। প্রতিবাদ যথেষ্ট নয়। প্রতিবাদের সর্বোচ্চ সফলতা কী হতে পারে? প্রতি-‘চেতনা’র প্রতিস্থাপন। নতুন পদ্ধতির স্বৈরাচার। হয়তো আরও বড় দুরাচার। দরকার ‘বাদ’প্রতিবাদ শুধু নয়। ‘বাদ’ বলতে নতুন-পুরাতন কোনো ‘ইজম’ নয়। বাদ মানে বাদীর অবস্থান থেকে কথা বলা। বিবাদী বা প্রতিবাদীর অবস্থান থেকে নয়। এর মানে নিজেরাই রাষ্ট্র হয়ে ওঠা।
আমরাই রাষ্ট্র। রাষ্ট্রকে যতদূর পর্যন্ত আমরা করতে দেব, ততদূর পর্যন্তই তা রাষ্ট্র। রাষ্ট্র চলে সম্মতির ভিত্তিতে। বলপ্রয়োগের জন্যও সম্মতি লাগে। মহাবল প্রয়োগের জন্য মহা-সম্মতি। আমাদের সম্মতিতেই চলছে এই রাষ্ট্র। আমাদের সম্মতিতেই বন্ধ হয় ফেসবুক। শুধু সরকারবিরোধীদের জন্য নয়। সরকারপন্থীদের জন্যও বটে। এরই নাম বলতে চাচ্ছি সর্বাত্মক রাষ্ট্রপন্থা।
‘চেতনাবাদ’ রাষ্ট্রীয় পদার্থ। কোনো বিশেষ পার্টির মামলা নয়। একমাত্র ‘ক্রিপ্টো-পার্টি’ ছাড়া সব পার্টিই রাষ্ট্রীয়, রাজনীতিবাদী, রাজতন্ত্রী। রাষ্ট্র ও রাজতন্ত্র কাচ বা পাথরের জিনিস নয়। এ জিনিস গুলতি বা ডিনামাইট মেরে ভাঙা যায় না। এ হচ্ছে ‘চেতনা’র তৈরি জিনিস। যেমন জেলখানা। এর দেয়াল পাথরের দেখতে হলেও আসলে কাগজের তৈরি। বিশেষ কতগুলো বিশ্বাস ধারণা মূল্যবোধ চেতনা এবং আলাপ-আলোচনার ওপর ভিত্তি করেই জেলখানা রচিত এবং সুরক্ষিত।
”যতবার জেল-ব্রেইক ঘটে ততবার জেলের প্রাচীর আরও দৃঢ় হয়। উঁচু হয়।” দুর্লঙ্ঘ হয়।
জেল বিলোপ করতে গেলে নতুন ধারার আলাপ-আলোচনার বহু কালের অনুশীলন দরকার। অন্য উপায় নেই।
রাষ্ট্র আসলে সম্পর্ক। বিশেষ ধরনের সম্পর্কপ্রণালি। রাষ্ট্রকে/রাষ্ট্রপন্থাকে বদলাতে গেলে বর্তমান রাষ্ট্রীয় সম্পর্কপ্রণালিটাকে বদলাতে হবে। কাগুজে সম্পর্কপ্রণালির জায়গায় বানাতে হবে মানবীয় সম্পর্কপ্রণালি। রাষ্ট্রীয়-প্রাতিষ্ঠানিক-পারিবারিক একেকটি পদের সঙ্গে অন্য পদের পদ-পদবিগত সম্পর্কপ্রণালির জায়গায় লাগবে ব্যক্তিমানুষ ও যূথমানুষের সঙ্গে অন্য ব্যক্তিমানুষ ও যূথমানুষের সম্পর্কপ্রণালি।
বিদ্যমান রাষ্ট্রপন্থায় আমার পরিচয় ‘জাতীয় পরিচয়পত্র’ মাত্র। ভোটার মাত্র। ক্রেতা বা গ্রহীতা মাত্র। আমাদের এসব কাগজের পরিচয় থেকে মানুষের পরিচয় অর্জন করতে হবে। জেল বিলোপের মতো বিদ্যমান রাষ্ট্রতন্ত্রের বিলোপ নিয়ে আলাপ শুরু হোক। নতুন ধারার আলাপ।
1991,1996,2001,মূলত বাংলাদেশ আমলে এই তিনটি নির্বাচনকে মানুষ গ্রহন যোগ্য হিসাবে মানে, এরপর গনতন্ত্র আবার সুদূর পরাহত ||রাজনীতি বিজ্ঞানের একজন ছাত্র হিসাবে আমি বলতে পারবোনা বর্তমানে কোন পদ্ধতির শাসন বাংলাদেশে চলছে, যে ইসির পক্ষপাতিত্ব খোলা বইয়ের মতো, একেবারে কাছের অতীতে যে নির্বাচন গুলো হলো তার কোনটাই মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি,#মূলপ্রসঙ্গ:পৌরসভা নির্বাচন বিরুধী দলকে অংশগ্রহন করতে বলা হয়েছিল ড. আসাদুজ্জামান রিপন মুখপাত্র হিসাবে বলেছেন বিএনপি ভোটে যাবে,এবং গিয়েছিল, আর কি, কেমন দৃশ্য জাতী দেখেছে আর বিশ্ব বিব্ক নিস্তব্দ দাড়িয়ে দেখছিল ||
এর আগে উপজেলা নির্বাচনে প্রথম দুই ধাপে সরকারী হস্তক্ষেপ না করায় বিএনপি ও জামায়াত সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায়, নয়টি সিটি কর্পোরেশণও বিএনপির হাতে চলে যায়, ঢাকা ভাগ করে, চট্টগ্রামে দিনের এগারোটার মধ্যে সরকারী দল জোড় করে নিয়ে যায়, যদি এই একই ষ্টাইলে সরকার নির্বীচন চালান, তাহলে ভবিষ্যতে নির্বাচনের কোন প্রয়োজন নাই, শুধু শুধু দেশের টাকা, সময় ও রক্ত নষ্ট করে কি লাভ, লীগের প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা দিয়ে দিলেই ভালো হবে, রক্ত অর্থ সময় সবই বাচবে, আর যদি সদিচ্ছা থাকে যে, যা হয়েছে তাতো হয়েগেছেই, গনতান্ত্রিক ধারায় দেশের রাজনীতিকে পরিচালনা করবেন, তাহলে সুন্দর ও সুষ্ঠ নির্বাচন করে দেশের মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে নির্বাচনই সমাধানের পথ, আর জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠভাবে করতে হলে লীগকে এ কথা ভেবেই নির্বাচন দিতে হবে যে সরকারী দল হারবে, তবে গো হারা হারবেননা যদি নিরপেক্ষ ইসি গঠন করে ভোটের ব্যবস্থাপনাকে পরিবর্তন করার জন্য একটি পরামর্শ গ্রহন করতে পারেন, যেমনপ্রদত্ত ভোটের % পার্সেন্টিস অনুযায়ী আসন বন্টনের ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন, তখন কারো ভোটই পচা যাবেনা, কোন দল একেবারে কম আসন বা আসন শূন্য হবেনা, কমিউনিষ্ট পার্টিরও কমপক্ষে 3/4 টি আসন পাবে, জোট নির্বাচনের আগে হচ্ছে এটা গনতন্ত্রের পরিপন্থি, এটা কিছু দলকে মেরুদন্ডহীন করে ফেলছে বা ফেলবে, মার্কা অনুযায়ী ভোটে যার যার মার্কা বহাল থাকবে, তখনসত্যিকারেরগনতন্ত্রপ্রতিষ্ঠিত হবে, এখন যে গনতন্ত্র তাকে বলে সংখ্যালঘু গনতন্ত্র কেননা প্রতিটি আসনে দেখা যায় যে, বিএনপি পাইলো 103000লীগ পাইলো 117000জামায়াত পাইলো 40000জাতীয় পার্টি 22000অন্যান্য 25000মোট প্রদত্ত ভোট 307000লীগ পাস করলো 117000তাহলে দেখা যায় 190000 ভোটার বিভিন্ন দলে ভোট দিলেও যিনি পাস করেছেন তাকে 190000 লোক কিন্তু সমর্থন করে নাই, এই জন্য এই পদ্ধতিকে সংখ্যালঘু গনতন্ত্রবা সংখ্যালঘু সরকার বলা হয়, এই পদ্ধতিতে প্রেসিডেন্সিয়ালসরকার হলে ঠিকছিলো, দ্বিদলীয় ব্যবস্থার জন্যও ঠিক আছে, কিন্তু সংসদীয় বা বহুদলীয় ব্যবস্থার জন্য সঠিক নয়, এটা টেকসই গনতন্ত্রের ক্ষেত্রে বিরাট অন্তরায়, আমরা যদি সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চাই, আমরা যদি টেকসই গনতন্ত্র চাই, আমরা যদি রাজনৈতিক হানাহানি পরিবারতন্ত্র ও দূর্নীতি, ব্লেইম গেইমথেকে মুক্তি চাই, তাহলে এই বিষয় গুলো নিয়ে ভাবতে হবে, নইলে সব সময় অল্প সমর্থনের লোক বা দল ক্ষমতা পাবে আর তার দুইগুন লোক রাস্তায় বিরুধীতা করতেই থাকবে, অশান্তি বিরাজিত থাকছে, এ জন্য আমি আমার বিভিন্ন লেখায় এ পরামর্শ দিয়ে আসছি, আমার অনুরোধ থাকবে এভাবে দলগত আচরণে যেভাবে বিরুধী দলকে মোকাবেলা করা হচ্ছে তাতে শত্রুতা থেকেই যাবে, প্রতিশোধের রাজনীতি সব দলকেই পরিহার করতে হবে, তানাহলে এইসব পৌরসভা, ইউনিয়ণ পরিষদ, কোন ভোটেই শান্তি আসবেনা, ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনে গনতন্ত্রের ভবিষ্যত নির্ভর করছে নির্বাচন পদ্ধতির উপর, লেভেল প্লেইং ফিল্ডের উপর, যা আমরা সবাই চাই কিন্তু কিভাবে চাই এটা আমি ক্ষূদ্র জ্ঞান দ্বারা প্রকাশ করলাম, সবাইকে একটু ভেবে দেখার অনুরোধ করছি ||গনতন্ত্রের সরকার কায়েম হউক এবং টেকসই হউক এটাই আমাদের শুভ কামনা, কোন দল ক্ষমতায় আসলো আমাদের সেটা দেখার বিষয়না, দেখার বিষয় ম্যান্ডেট পেয়েছে কিনা, এরপর শেষে একটাকথা বলে আজকের এই প্রাসঙ্গিক আলোচনা ইতি টানবো, গনতন্ত্র তুমি প্রতিষ্ঠিত হওএবং থাকো ঠিক তোমারই মতো করে……