আসলে গরু দুই পক্ষের কাছেই মুল্যবান।একপক্ষ দেবতা মানে সেজন্য মুল্যবান,আরেকপক্ষ খেতে মজা পায় সেজন্য মুল্যবান।কিন্তু হালে যে বাজার দর, নিষিদ্ধ করলে যে তাদেরই লাভ সেটা তারা বুঝেনা,দাম কমে গেলে জন্মের খাওয়া খেতে পারবে গরু। যাই হোক, মূল কথা এটা না। কথা হচ্ছে হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান (হিবৌখৃ) ঐক্য পরিষদ যে দাবী জানাইছে সেখান থেকে গুরু খাওয়ার বিষয়টা মূল ইস্যু হইল কেন? এটা কি তাঁদের মূল বক্তব্য ছিল? ইসলামপন্থীরাও এটা নিয়ে লাফাইল ক্যা? (ভাল করে পড়ুন নিউজটা)
হিবৌখৃ ঐক্য পরিষদের অন্যতম দাবী হল তাঁদের দখল করা সহায় সম্পত্তি’র চার ভাগের ৩ ভাগই আওয়ামীলিগ ও তদসংস্লিষ্ট লোকদের দখলে। বাকী এক ভাগ কি ইসলামপন্থীদের দখলে এমন কথা তারা বলেছে? তাহলে ইসলামপন্থিরা লাফাইতেছে কেন? হায়রে ইসলামপন্থি! কোন দিন রাজনীতি শিখবেন আপনেরা?৪৭ এও বুঝেন নাই, ৭১ এও না, ২০০১ এও না, ২০১৬ তেও আপনেরা রাজনীতি বুঝবেন না? ৪৭ এর পর থেকে আজ অবধি হিন্দুদের বাড়ি ঘর দখল যা হয়েছে তা অধিকাংশই জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা।তারপরেও তারা আওয়ামীলিগরে ভোট দেয় কেন এই প্রশ্ন কি আপনারা করছেন? এটা একটা ঐতিহাসিক সিলসিলা।
হিন্দুদের মূল অনুযোগ, অভিযোগ ও দাবী কি বাংলাদেশে? এই প্রশ্নের উত্তরের আগে জেনে নিন ইন্ডিয়ার মুসলমানদের মূল দাবী কি ভারতে? কলকাতার মুসলমানদের নিয়ে কিছু দিন আগে অমর্ত্য সেনের রিপোর্ট টি আপনাদের মনে আছে? (পড়ুনঃ পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের ভয়াবহ চিত্র,বঞ্চনা আর দারিদ্র্য সীমাহীন: অমর্ত্য সেন) এবার মিলিয়ে নিন।
কলকাতার মুসলমানদের মূল দাবী হচ্ছে- ভাই আমি জানডা লইয়া কোন রকম বাঁচতে চাই-আমারে শুধু ভাত, ডালের আর বাসস্থানের সুযোগ দাও।যার যেইটা অভাব সেতো সেটাই চাইবে তাইনা? বাংলাদেশের হিন্দুদের দাবী কিন্তু চাকুরী না, সামাজিক সুযোগ না, শিক্ষা না, খাবার দাবারও না, সমঅধিকারও না……কারন এগুলো তারা সংখ্যাগুরু মুসলমানদের চেয়েও আনুপাতিক হারে বেশিই পাচ্ছে। তাঁদের মূল দাবী হচ্ছে নিরাপত্তা এবং অর্পিত সম্পত্তি ফেরত (যাকে আগে বলা হত শত্রু সম্পত্তি)। নিরাপত্তা ইস্যুটিও এই অর্পিত সম্পত্তির সাথে সম্পর্কিত।এবার কি আপনার হিসেবে মেলে?
যখনই হিন্দুদের কেউ তাঁদের সম্পত্তি দাবী করে তাকে বিভিন্ন ছুতায় আক্রমণ করে তাঁদের জমি দখল করে রাখা রাগব-বোয়ালেরা। কারা এই রাগব বোয়াল? হিবৌখৃ ঐক্য পরিষদের দাবী অনুযায়ী ৩/৪ ভাগ বর্তমান সরকারী দলের লোকেরা! বুঝেন হিসাব?
এরপর ওইটাকে সাম্প্রদায়িক আক্রমণ বলে প্রচার করে রাগব বোয়ালদের পরিচালিত মিডিয়া!তো, তারা তো স্যাকুলার।তাইলে কে এই সাম্প্রদায়িক কাজটা করল? হে হে খেলার মাঠে তখন চলে আসে ইসলামপন্থি মুসলমানেরা! অনেক ক্ষেত্রেই এই বেকুবদের উস্কানী দিয়ে ঊন্মাদনা সৃষ্টি করে ৩/৪ ভাগ দখল ভোগকারী স্থানীয় রাগব বোয়ালেরা। আবার এই ভুক্তভোগী হিন্দুরের দেখতে চলে যাবে রাগব বোয়ালের, সেটা মিডিয়ায় আসবে, তাঁদের পিঠ চুলকাবে দেশের অন্যপ্রান্তের রাগব বোয়ালেরা (সে নিজেই হয়ত তার এলাকায় হিন্দুদের জমি দখল করে আছে)।
তখন ভারত দেখবে আহা! হিউমেন রাইটস সংগঠন বলবে আহা! আমেরিকা-ইউরোপ বলবে উহু! সব দোষ নন্দঘোষ ইসলামপন্থিদের ঘাড়ে।শাহরিয়ার কবির, খুশি কবীর, সুলতানা কামাল একটা ক্যামেরা নিয়ে চলে যাবে ছবি তুলতে-ভিডিও করতে, বলবে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত।আসলেই তারা নির্যাতিত। সাংবাদিক অঞ্জন রায়ে’র ভিটে মাটি দখল করল কয়েকদিন আগে কে যেন? (পড়ুনঃ সাংবাদিক অঞ্জন রায়ের বাড়ি প্রভাবশালীদের দখলে) ।
রাগব বোয়ালদের মিডিয়াবাজ লাঠিয়ালরা বলবে এই মৌলবাদীরা ক্ষমতায় গেলে আপনেরা (সংখ্যালঘু) শেষ হইয়ে যাবেন। আসেন আমাদের সাথে স্যাকুলারিজম করেন……অথচ তথাকথিত স্যাকুলারদের হাতেই হিন্দুরা মার খেয়েছে, খেয়ে যাচ্ছে বেশি! ব্যতিক্রম কিছু আছে হয়ত।বিভিন্ন জায়গায় ইসলামপন্থীরা তাঁদের মন্দির পাহারা দেয়ার নজির আছে।অবাক হল, হিন্দুরাও বেমালুম ভুলে গিয়ে সাধারন মুসলমানদের যত প্রকার টিটকারী, উস্কানী, গালি দিয়ে ক্ষোভ ঝাড়ে।সেটা করতে তাঁদের কেউ কমিউনিস্ট সাঁজে, কেউ নাস্তিক সাঁজে, কেউ কেউ মুসলিম নামও নেয়।মজার বিষয় হচ্ছে, কমিউনিষ্ট হিন্দুরা অন্যদের মত সবকিছুতে শ্রেনী’র রাজনীতি করলেও মুসলাম, ইসলাম রিলেটেড কোন বিষয়,হউক সেটা ননপলিটিক্যাল বা কালচারাল সেখানে তারা খুঁজে সাম্প্রদায়িকতা!
বাংলাদেশ হিন্দুদের বিরুদ্ধে একটা উস্কানীমুলক ক্যাম্পেইন চলতেছে।সংখ্যাগুরু মানুষের অনেক যুক্তিক ক্ষোভ থাকতে পারে।কিন্তু ক্ষমতাসীনরা যেভাবে হিন্দুদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে তার পরিণতি খুব ভাল হয়না। এমনকি কালচারাল হিন্দুয়াইজেশনের চেষ্টা করছে (যেমন পাঠ্য পুস্তকে হিন্দুদের ধর্মীয় বিষয় অসাম্প্রদায়িকতার নামে আমদানী করার অভিযোগ উঠছে)।এগুলো সংখ্যাগুরু মানুষকে উস্কানী দেয়ারই লক্ষণ। ইতিহাসের বহু প্রমাণ রয়েছে যে এসব করে অসাম্প্রদায়িকতাতো হয়ই না বরং আরো উস্কে দেয়া হয় সাম্প্রদায়িকতা। মুসলিম লীগ সরকার এভাবে ব্যবহার করত বিহারীদের।ফলে ১৯৬৪ সালে আদমজীতে দাঙ্গা বাঁধে।এরপর ৭১ এ বাঙালীরা তাঁদেরকে কচুকাটা করে।
নিরীহ ইসলাম প্রেমিক মুসলমানদের সেজন্য সাবধান হতে হবে। মুসলমানেরা যেমন প্রান্তিক, গরীব তেমনি জাত পাতে ভরপুর হিন্দুদের মধ্যেও নিচু জাত (দলিত, অচ্যুত)এর হিন্দুই বেশি বাংলাদেশে।যারা দিনে আনে দিনে খেতে রোজ সংগ্রাম করে যেমনটা করে গ্রামের গরীব কৃষক, শ্রমিক মেহনতি মুসলিম। সংখ্যালগুদের রক্ষা করা শুধু নৈতিক নয় বরং ধর্মীয় দায়িত্বও।আর কিছু না পারেন, কোন দুর্ঘটনার সময় ক্ষমতাসীন রাগব বোয়ালদের দ্বারা ব্যবহৃত হবেন না।দাঙ্গা খুব ভয়াবহ বিষয়। ১৯৪৬ সালে কলকাতার দাঙ্গায় মুসলমানদের কে কি ভয়ানক নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে সেই ঘটনার একটি বর্নণা শেখ মুজিবুর রহমানের মুখ থেকে শুনুন;
মুসলিম লীগের তরুণ কর্মীরা যারা কলকাতা এবং পাটনায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় (১৯৪৬) হিন্দুদের ক্ষোভ থেকে মুসলমানদের রক্ষায় বহু চেষ্টা করে গেছেন, ক্ষুব্ধ তরুণ মুসলিম লীগ কর্মীদের মধ্যে একজন ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। সেসময় এক ঈদের দিনে শেখ মুজিবুর রহমান গান্ধীকে কলকাতা এবং পাটনায় হিন্দুদের নৃশংসতার শিকার কিছু মুসলমানের ছবি প্যাকেটে করে উপহার দিয়েছিলেন। শেখ মুজিবের ভাষ্যমতে, সেসব ছবির মধ্যে কোনোটি ছিল স্তন কেটে দেয়া মুসলমান নারীর, মস্তক বিচ্ছিন্ন শিশুর, জ্বলন্ত মসজিদের, আবার কোনোটিতে দেখা যাচ্ছিল রাস্তায় পড়ে থাকা লাশ। এরকম আরো অনেক নৃশংসতার দৃশ্য ছিল।’ কলকাতার হত্যাকান্ড-পূর্ব বাঙলার মুসলিমদের মনে এক গভীর দাগ ফেলেছিল। এর ফলে তাদের রাজনৈতিক চেতনায় পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার একটা মনোভাব তৈরি হয়েছিল। বিস্তারিত জানতে পড়ুন http://www.muldharabd.com/?p=445