[ নোটঃ বাংলা ট্রিবিউনে পুরো সাক্ষাতকারটি প্রকাশ হয়নি।কয়েকটি প্যারা তারা বাদ দিয়েছেন।এখানে পুরো সাক্ষাতকারটি প্রকাশিত হল। ]
প্রশ্ন: বতর্মানে কোন কাজে সম্পৃক্ত আছেন আপনি?
উত্তরঃ
পেশা হিসেবে দীর্ঘদিন শিক্ষকতায় ছিলাম। সম্প্রতি শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়ে এখানকার একটা সরকারী বিভাগে খন্ডকালীন কাজ করি।
কিছুদিন বিলাতের একটি অন্যতম প্রাচীন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। বর্তমানে সপ্তাহে কয়েকটি কুরআন সার্কেল পরিচালনা করি। পড়াশোনা এবং লেখালেখি করি। পড়াশোনাটা বেশি করছি কুরআন-কেন্দ্রিক। লন্ডনের বাংলা পত্রিকায় কলাম, সাহিত্য-সমালোচনা ও কবিতা লেখি। কয়েকবছর ‘কবিতা’ নামে একটি কবিতাবিষয়ক সাময়িকী সম্পাদনা করেছি।
প্রশ্ন: আপনার পরিবার, ছেলেমেয়ে? তারা কি করছেন?
উত্তরঃ
আমার স্ত্রী দেশে থাকতে শিক্ষক ছিলেন। এখানেও খন্ডকালীন শিক্ষকতা করেন। আমার দু ছেলে, দু মেয়ে। ছেলেদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ হয়েছে, এখন কাজ করছে। দু মেয়ে ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে। এ বছর এক মেয়ের এবং আগামী বছর ওপর মেয়ের গ্র্যাজুয়েশন শেষ হবে।
প্রশ্নঃ শেষবার কবে দেশে এসেছেন, আবার কবে আসবেন?
উত্তরঃ
২০০৩ সালে গিয়েছিলাম আম্মাকে নিয়ে আসতে। এর পর আর যাওয়া হয়নি। আবার কবে আসবো তা বলা কঠিন। তবে আমরা প্রবাসীরা দৈহিকভাবে ঘন ঘন দেশে না গেলেও স্বপনে-জাগরণে সব সময় দেশ নিয়ে থাকি এবং ভাবি।
প্রশ্নঃ আপনার রচিত কোনও গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে কি না? হলে নাম, প্রকাশনী?
উত্তরঃ
দুটো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। নির্বাচিত কলাম নিয়ে একটি, নাম ‘বিপরীত উচ্চারণ’। ওপরটি কবিতার বই, ‘যিসাসের আগমন অনিবার্য’। প্রকাশ করেছে কৈতর প্রকাশনী। আরো কয়েকটি পান্ডুলিপি প্রকাশের অপেক্ষায়।
প্রশ্নঃ আপনার সঙ্গে কথোপকথনে গোলাম আযম বলেছিলেন, ৭১ এ জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ নেই। আপনি এর উত্তরে কিছু বলেছিলেন কি? এ বিষয়ে আপনিইবা কি মনে করেন?
উত্তরঃ
অধ্যাপক গোলাম আযম আমার সঙ্গে কথোপকথনের সময় এ কথা বলেননি, বলেছেন ৮২ সালে ছাত্রশিবিরের বিরোধ-মীমাংসার রায় ঘোষণার সময়। আমার সেখানে কোন কথা বলার সুযোগ ছিলনা। আমি ছিলাম একজন দর্শক মাত্র।
এ বিষয়ে আমার মতামত ‘বিরাশি সালের কথকথা’র পর লিখিত পাদটীকায় আমি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি। আমার মতে নৈতিক বা রাজনৈতিক কৌশল, কোন বিচারেই ৭১ সালে তাদের ভূমিকা সঠিক ছিল না। তারা বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ইত্যাদি পালন করেন। অন্যদিকে তাদের অন-লাইন একটিভিস্টগণ মানুষকে ভিন্ন বার্তা প্রদান করেন। তারা সাংগঠনিকভাবে ৭১ সালের ভূমিকার ব্যাপারে শুরু থেকে নিরব ভূমিকা পালন করে আসছেন। এ নিরবতা রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্নবোধক হয়ে আছে। আমার মনে হয় বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ করে স্বাধীনতা-উত্তর প্রজন্ম এটাকে রাজনৈতিক অস্বচ্ছতা হিসেবে বিবেচনা করে। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলবো, আমার মতে দুটো প্রসঙ্গ বাংলাদেশের রাজনীতির জন্যে অপরিহার্য, অর্থাৎ ‘নান-নেগোশিয়েবল’। একটি ইসলাম এবং অপরটি মুক্তিযুদ্ধ। কোন রাজনৈতিক দল এর কোন একটির প্রতি উন্নাসিকতা বা বিরোধিতা করলে বাংলাদেশের জনগণ তাদের গ্রহণ করবে না।
প্রশ্নঃ আপনি বলেছেন, যাদের মুখের ভাষা এবং বুকের ভাষা এক নয়, তাদের সাথে জীবন বাজি রেখে কাজ করা সম্ভব নয়। এখনও কি তাই মনে করেন?
উত্তরঃ
এখন আরো অনেক কিছু মনে করি। তখন এ কথা বলার কারণে আমাকে অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে। কোন ব্যক্তির কথায় এবং কাজে স্বচ্ছতা না থাকলে এবং তা সমাজের সাথে সংশ্লিষ্ট না হলেও সমাজ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কিন্তু সামষ্টিক অস্বচ্ছতার দায় এর চেয়ে অনেক বেশি। এ অভিজ্ঞতা থেকেই আমি এ মন্তব্য করেছি। আমার মতে, সাংগঠনিক বক্তব্য এবং জনগণের কাছে প্রদত্ত অঙ্গীকারের মধ্যে সাযুজ্য বজায় রাখা সততার অনিবার্য দাবি। সে সততা না থাকলে কোন রাজনৈতিক দলের লিখিত ঘোষণাপত্র যত আকর্ষণীয় হোক না কেন এবং সে দলের লোকদের ব্যক্তিগত জীবনাচার বা চরিত্র ‘ফুলের মতো পবিত্র’ হলেও বৃহত্তর জনগোষ্ঠী তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।
প্রশ্নঃ ইবনে সীনার বৈঠকে গোলাম আযম আপনি ও আহমদ আবদুল কাদের এর সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিষয়টি আপনি আলোচনায় বলেছেন। সেখানে মতিউর রহমান নিজামীও ছিলেন। আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। কারাগারে আছেন নিজামী। আপনার কি মনে হয়, এখনও তাদের প্রভাব আগের মতোই আছে?
উত্তরঃ
আমার মনে হয়, তারা এখনো প্রভাবশালী। তাদের রাজনৈতিক চিন্তা ও সাংগঠনিক নির্দেশনা অনুযায়ী এখনো জামায়াতে ইসলামী চলছে এবং ভবিষ্যতেও চলবে। সরকারের গ্রেফতার-নির্যাতন এবং ঘুম-হত্যা তাদের অনুসারীদের আরো সংহত এবং তাদের বিশ্বাসকে আরো দৃঢ় করছে।
প্রশ্নঃ যাদের জন্য ছাত্র শিবির ছাড়তে হয়েছে, আপনাদের কমিটি বাতিল হয়েছে, তাদের সঙ্গে কি যোগাযোগ হয়? তারা কি অনুতপ্ত?
উত্তরঃ
সাধারণতঃ তাদের সাথে আমার যোগাযোগ হয় না। কারো কারো সাথে ঘটনাচক্রে দেখা হয়ে যায়। দেখা হলে সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে সালাম ও শুভেচ্ছা বিনিময় হয়। তারা অনুতপ্ত কি না সে ব্যাপারে আমার কাছে সরাসরি কোন তথ্য নেই। কারণ এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারো সাথে কখনো আমার মতবিনিময় হয়নি।
তবে আমার ধারণা, তারা মোটেই অনুতপ্ত নয়। সে সময় তাদের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ সংগঠনকে বড় একটা বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছে বলে তারা মনে করেন। তারা হয়তো ভাবেন, এর মাধ্যমে তারা একটা ‘মহান দ্বীনি খেদমত’ আঞ্জাম দিয়েছেন। তাদের কর্মীরাও একই বার্তা ধারণ করেন। ‘বিরাশি সালের কথকতা’ অন-লাইনে প্রকাশের পর আমি হাজার হাজার বার্তা পেয়েছি। এর মধ্যে তাদের অনেক নেতাকর্মী রয়েছেন। তাদের বক্তব্য থেকে বুঝেছি, নেতৃবৃন্দ যে ভাবেই হোক তাদের কর্মীদের মোটামুটি আস্থায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। প্রয়োজনে এ উদ্দেশ্যে অনেক কল্প-কাহিনী রচনা করা হয়েছে এবং ভিন্নমতের লোকদের শাস্তি বা পুরস্কার দিয়ে সাইজ করা হয়েছে।
প্রশ্নঃ ছাত্র শিবির ছেড়ে জামায়াতে যোগ না দেওয়ায় সিলেটে বিভিন্ন চাকরীতে যোগ্য হয়েও আপনাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন বিদেশ বিভুঁইয়েও কি দলটির নেতাকর্মীরা আপনার পিছু নেয়?
উত্তরঃ
‘পিছু নেয়’ বলতে আপনি কী বলতে চাচ্ছেন আমার কাছে পরিস্কার নয়। আমি তাদের কারো কাছে কোনদিন কোন সুবিধা বা আশীর্বাদ প্রত্যাশী হইনি। তাদের সাংগঠনিক বলয়ে আমার কোন যাতায়াত নেই। সবার সাথে আমার চমৎকার ব্যক্তিগত সম্পর্ক রযেছে। কারো সাথে কখনো ঝগড়া-বিবাদ হয়নি। আড়ালে-আবডালে তারা যে সব কথা বলেন তা মাঝে মাঝে আমার কানে চলে আসে। এ থেকে বুঝতে পারি, সর্বত্র তারা সাফল্যের সাথে প্রয়োজনীয় ‘বার্তা’ গ্রহণযোগ্যভাবে পৌঁছে দিয়েছেন। তাদের এখানকার কর্মীরা সাংগঠনিক ‘ওহি’র উপর পূর্ণ আস্থা রাখেন এবং ইসলামী আন্দোলনের বৃহত্তর স্বার্থে যে কোন কাজ করতে সব সময় প্রস্তুত আছেন।
প্রশ্নঃ আপনার কমিটির সভাপতি আহমদ আবদুল কাদের শিবির ছেড়ে যুবশিবির করার পর চট্টগ্রাম কলেজে আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন। আপনার ক্ষেত্রে এমন আচরণ করা হয়েছে কী না?
উত্তরঃ
না, আমাকে দেশে-বিদেশে কখনো এ রকম অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়নি। নিচের পর্যায়ের অতি-উৎসাহী কেউ কেউ কখনো উষ্মা বা বিরক্তি প্রকাশ করেছেন মাত্র। দেশে থাকতে আমার সাথে তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক চমৎকার ছিল। এ দেশেও এর ব্যত্যয় দেখা যায়নি। শুধু ‘বিরাশির কথকতা’ প্রকাশের পর কিছু গালি-গালাজ শুনতে হয়েছে। দুয়েকজন শুভানুধ্যায়ী সেজে সাবধানে চলাফেরা করতে বলেছেন।
প্রশ্নঃ যুবশিবির গঠিত হবার পর জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন ভাষায় সংগঠনটির বিরুদ্ধে কথা বলেছে। এটি অন্যান্য ধর্মভিত্তিক সংগঠনেও দেখা যায়। এর কারণ যদি ছোট করে বলেন?
উত্তরঃ
আমার মতে এটা ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় বিরোধের সুত্রপাত হয়েছে রাজনীতিকে কেন্দ্র করে। প্রতিটি পক্ষ তাদের রাজনৈতিক বিরোধকে ধর্মীয় মোড়কে উপস্থাপন করে জনগণের সমর্থন অর্জনের চেষ্টা করেছে। এখনো সেটাই চলছে। ইসলামে রাজনীতি আছে এবং ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক বিধান আর ধর্মীয় বিধানের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এ দুটোকে গুলিয়ে ফেলার মানসিকতা বা অভ্যাস বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক সকল দলের মধ্যেই রয়েছে। বাংলাভাষীদের মধ্যে ধর্মীয় রাজনীতির প্রথম উদ্যোক্তা জামায়াতে ইসলামী নয়। কিন্তু বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে বহু বিষয়ে জামায়াতের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে দেখা যায়। হতে পারে, এখানেও অন্যরা জামায়াতকে অনুসরণ করছেন। অনেক রাজনীতিবিদ এটা বুঝতে অক্ষম যে একই উদ্দেশ্যে গঠিত কয়েকটি দলের মধ্যে দৃশ্যমান স্বাতন্ত্র্য না থাকলে কাজের ফলাফল বড় দলের হিসাবের খাতায় জমা হয়।
প্রশ্নঃ গোলাম আযমের সঙ্গে নানা সময়ে কথা হয়েছে। শিবির ছেড়ে দেওয়ার পর আপনি সিলেটে গোলাম আযম আমন্ত্রিত হলে আপনি তাকে নাটক সিনেমায় লগ্নি করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘জামায়াত নাটক সিনেমা নিজ নামে না করে বিত্তশালী লোকদের উৎসাহিত করতে পারে। অর্থের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রীদের এ কাজে পাওয়া যাবে।’’ পরবর্তীতে বিগত কয়েক বছরে শিবিরের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগে আমরা সেটি দেখেছি। তবে সেক্ষেত্রে অশ্লীলতার অভিযোগে মূলধারা চলচ্চিত্র থেকে নির্বাসিত ঝুমকাকে দিয়েও নাটক করানো হয়েছে। এটি কি আপনার পরামর্শের ফল?
উত্তরঃ
আমার পরামর্শের ফল কি না আমি জানি না, কেউ আমাকে এ ব্যাপারে বলেনি। শিবির ঝুমকাকে নিয়ে নাটক করেছে বলে আমার জানা নেই। সাহিত্য, গান, নাটক, সিনেমা ইত্যাদি নিয়ে আমি সাংগঠনিক জীবনে অনেক কথা বলেছি। কর্মীদের কথা বলছি না, তাদের নেতাদের এ সব সম্পর্কে ধারণা খুব স্পষ্ট নয় এবং এর কোন গুরুত্ব তাদের কাছে আছে বলে মনে হয় না। তাই আমার দেয়া পরামর্শ তারা গ্রহণ করবেন, এটা একটা আকাশ কুসুম কল্পনা মাত্র।
প্রশ্নঃ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দলের নাম পরিবর্তনের বিষয়টি আপনারা চেয়েছেন। সর্বশেষ সাবেক জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ফাঁসিতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত কামারুজ্জামানও চেয়েছিলেন। আদৌ কি জামায়াতে এ ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে? পর্যবেক্ষক হিসেবে যদি বলেন?
উত্তরঃ
জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান জেল থেকে জামায়াতে ইসলামীতে সংস্কারের উদ্দেশ্যে যে সকল পরামর্শ পাঠান তা সংবাদপত্রে এসেছে। জামায়াত সেটাকে কতটুকু বিবেচনায় নিয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে আমরা দেখেছি, সে সব পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করে জামায়াতের দলীয় পত্রিকায় দুটো লেখা প্রকাশিত হয়েছে। এর মাধ্যমে কামারুজ্জামানের পাঠানো পরামর্শের ব্যাপারে জামায়াতের দলীয় মনোভাব কী তা স্পষ্ট বুঝা যায়।
আমার মতে, স্বাভাবিক অবস্থায় জামায়াতের মধ্যে কোন পরিবর্তন আসবে না। সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে প্রথমে তারা এর বিরুদ্ধে আইনী লড়াই চালাবেন। আইনী লড়াইয়ে জিততে না পারলে তারা নতুন নামে আত্মপ্রকাশের চিন্তা করতে পারেন, এর পূর্বে নয়। তবে সরকারের দমননীতি অব্যাহত থাকলে তারা গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত হয়ে এবং বিভিন্ন নামে পার্শ্বসংগঠন গঠন করে কাজ চালিয়ে যেতে পারেন।
আরেকটি কথা এখানে স্পষ্ট করা দরকার। ‘আমরা নাম পরিবর্তন চেয়েছি’ – কথাটা সরাসরি এ রকম নয়। জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক ভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখেছে, এ ব্যাপারে জামায়াত বা জামায়াত-বিরোধী কারো কোন দ্বিমত নেই। বাংলাদেশের জনগণের কাছেও সেটা অস্পষ্ট নয়। আমাদের কথা ছিল, এমনি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে ‘জামায়াতে ইসলামী’ নিজ নামে রাজনীতি করতে হলে ৭১ সালে তাদের ভূমিকার ব্যাপারে স্পষ্টভাবে কথা বলতে হবে। তাদেরকে বলতে হবে, ‘আমরা ৭১ সালে সঠিক কাজ করেছি’ এবং সাথে সাথে এর যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে হবে। নতুবা বলতে হবে, ‘৭১ সালে আমাদের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না।’ এটা করলে তারা রাজনৈতিক সততার পরিচয় দিবেন যা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে যেকোন রাজনৈতিক দলের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। যদি এর কোনটাই তারা করতে না চান তা হলে তাদের উচিত, পুরাতন নাম বাদ দিয়ে নতুন নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলা। তখন ব্যক্তিগত দায় বজায় থাকলেও ৭১ নিয়ে তাদের সাংগঠনিক কোন দায়-দায়িত্ব থাকবে না। ঠিক এমনটি মাওলানা আব্দুর রহীমও চেয়েছিলেন।
প্রশ্নঃ জামায়াতের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার কি মতামত?
উত্তরঃ
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে আমার প্রত্যক্ষ কোন অভিজ্ঞতা নেই। দীর্ঘদিন থেকে আমি বাংলাদেশের বাইরে আছি। কোন রাজনৈতিক দলের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই। তা ছাড়া আমি কোন ভবিষ্যত-বক্তাও নই। বাংলাদেশ সম্পর্কে আমার জানার মাধ্যম শুধুমাত্র প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া।
রাজনৈতিক অঙ্গনে তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য ছিল ২০০১ সালে। চারদলীয় জোটের কারণে সে সময় তাদের দলের প্রধান দু শীর্ষনেতা মন্ত্রীত্ব পেয়েছিলেন। তখন তাদের এমপি ছিলেন ১৮ জন এবং প্রাপ্ত ভোট ছিল মাত্র শতকরা ৬ ভাগের কাছাকাছি। পক্ষান্তরে দু হাজার আট সালের নির্বাচনে তাদের প্রাপ্ত ভোট ছিল শতকরা ৫ ভাগের মতো এবং তখন তাদের মাত্র দু জন এমপি নির্বাচিত হন। তাদের জনসমর্থন বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়েছে ধরে নিলেও তা বড় জোর শতকরা ৭ থেকে ৮ পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। ২০০১ সালের শুভ-সময়ে যারা জামায়াতের সাথে সখ্যতা গড়েছেন তাদের শতকরা কতজন আগামীতে নিজ অবস্থানে টিকে থাকবেন এর কোন নিশ্চয়তা নেই। কারণ বাংলাদেশে কখনো সুযোগ সন্ধানী লোকের অভাব হয় না।
এর সাথে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এবং আলেম সমাজের বিরোধিতাকেও বিবেচনায় নিতে হবে। এটা জানা কথা, বাংলাদেশের আলেম সমাজের মধ্যে যারা তৃণমূল পর্যায়ে অবস্থান করেন এবং জনগণের নাড়ীর সাথে যাদের যোগাযোগ আছে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ জামায়াত-রাজনীতির বাইরে অবস্থান করছেন। সুতরাং বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আছে বলে মনে করার কোন কারণ দৃশ্যমান নয়। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অভাবনীয় কিছু না ঘটলে এটাই বর্তমান বাস্তবতা।
জামায়াতের ১৯৭১ এর ভূমিকা অবগত হয়ে মনেপ্রাণে মেনে না নিয়ে কেউ শিবিরের সদস্য এবং কোন সিটির সভাপতি হওয়ার নজির নেই। তাছাড়া জামায়াতের ৭১’র অবস্থান প্রতিটি কর্মীর নিকট এমনকি জনগণের নিকটও পরিস্কার, যার প্রতিফলন ঘটেছে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ‘জামায়াত ৪০ বছর আগে যা বুঝেছিল তা আমরা বুঝেছি ৪০ বছর পর’ কমেন্টের মাধ্যমে।
নানা কারণে দলের মধ্যে ভাঙ্গন এবং উপদল তৈরী হতে পারে। এক্ষেত্রে দলের মূল দায়িত্বশীলগণ দলকে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য চেষ্টা করেন তেমনি ভিন্নমত পোষণকারীরাও তাদের আপ্রাণ চেষ্টা অব্যাহত রাখেন ঘটনা প্রবাহ নিজেদের পক্ষে নেয়ার জন্য। দোষ-গুণ খুঁজতে গেলে দু’পক্ষেরেই বের হবে- নিঃসন্দেহে।
আব্দুল কাদের বাচ্চু ভাইয়দের সাথে শুধুমাত্র জামায়াতের নাম এবং ৭১নিয়ে সমস্যা তৈরী হয়েছিল তা আমি বিশ্বাস করি না। ইগো,নেতৃত্ব পরিবর্তন এবং অন্য কিছুকে ঢাকা দেয়ার জন্য পরবর্তীতে ইস্যু দু’টো উত্তাপন হয়ে থাকতে পারে।
পরবর্তীতে জনাব আহমদ আব্দুল কাদের এবং প্রিয় রেজা ভাই’র জামায়াত নেত্রীবৃন্দের সাথে সাক্ষাত এবং নিজেদেরকে ইসলামের উপরই প্রতিষ্ঠিত রাখার প্রয়াস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, জামায়াতের নেত্রীত্বে বাংলাদেশে ইসলাম কায়েম হলে তার নাখোশ নন। তারা জামায়াতকে ভালোবাসেন বলেই বিভিন্ন সময় জামায়াতের ভুলত্রুটি তুলে ধরে সংশোধনের চেষ্টা করেন।
আমি ব্যাক্তিগতভাবে এখনো রেজা ভাইকে ভালোবাসি যেমনটি ছাত্রজীবনে বাসতাম। তবে আমি এখনো জামায়াত ছাড়া কোন বিকল্প চিন্তা করি না বাংলাদেশের বর্তমান সময় পর্যন্ত।
সাক্ষাতকারটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। প্রাক্তন ভাইয়েরা যদি এ ভাবে নিয়মিত আমাদেরকে একেকটা সাক্ষাতকার উপহার দেন তাহলে আমাদের জড়তা হ্রাস পাবে।
আসসালামু আলাইকুম…….
যথার্থই বলেছেন-
“””আমি স্পষ্ট ভাষায় বলবো, আমার মতে দুটো প্রসঙ্গ বাংলাদেশের রাজনীতির জন্যে অপরিহার্য, অর্থাৎ ‘নান-নেগোশিয়েবল’। একটি ইসলাম এবং অপরটি মুক্তিযুদ্ধ। কোন রাজনৈতিক দল এর কোন একটির প্রতি উন্নাসিকতা বা বিরোধিতা করলে বাংলাদেশের জনগণ তাদের গ্রহণ করবে না।”””
Mohammad Lokman,পরবর্তীতে জনাব আহমদ আব্দুল কাদের এবং প্রিয় রেজা ভাই’র জামায়াত নেত্রীবৃন্দের সাথে সাক্ষাত এবং নিজেদেরকে ইসলামের উপরই প্রতিষ্ঠিত রাখার প্রয়াস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, জামায়াতের নেত্রীত্বে বাংলাদেশে ইসলাম কায়েম হলে তার নাখোশ নন। তারা জামায়াতকে ভালোবাসেন বলেই বিভিন্ন সময় জামায়াতের ভুলত্রুটি তুলে ধরে সংশোধনের চেষ্টা করেন।>>
>>জামায়াত বা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত কি বিশ্বে কোথাও ইসলাম প্রতিষ্টা করতে পেরেছে?আমরা দেখতে পাচ্ছি ১৯৭৯ সালে ইমাম খোমেনীর(রঃ) অধীনে ইরানে একটি কুরানী রাষ্ট্র প্রতিষ্টা হ্যেছে।ইরানের সংখ্যাগরিষ্ট মুসলামেন্রা কুরান ও নবী পরিবারের(আঃ) অনুসারী,যাদেরকে আমরা ১২ ইমামিয়া শিয়া হিসাবে জানি।তাহলে দেখা যাচ্ছে,আক্কিদাগত বিশাল পার্থক্যের কারনে তথাকথিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত ইসলাম প্রতিষ্টায় ব্যররথ,আর শিয়ারা ইসলাম প্রতিষ্টায় সফল।
Jonab Mushkil Ahsan,
I am appalled to read your derogatory comments regarding the the writings of Farid Ahmad Reza. You have asked for the role model movement, you ought to be aware of what movement Fard Ahmad Reza, Ahmad Abdul involved with. Rightly, you are aware of as evident by one of your comments regarding Khilafat Majlis. Jamaat Shibir does not represent Islamic Movement in Bangladesh, they represent only part of it. Your denial acknowledgement of any other Islamic movement existing in the country is evident of the disease Jamaat/Shibir has ‘Ham say bora kownh hay’. Blind loyalty to any group should not refrain one from seeing the truth and seeing one’s own folly.
Role model Islamic movement developed by Ahmad Abdul Quader and others who do not agree with Jamaat and their secular politics is called Khilafat Majlis.