পানামা পেপারস বিস্ফোরণে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশী ২৫ প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম। তারা বিভিন্ন অফসোর কোম্পানির নামে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন বলে বলা হয়েছে পানামা পেপারসে। বলা হয়েছে এর মধ্যে রয়েছে শীর্ষ স্থানীয় বেশ কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেচিটভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)র ওয়েবসাইটে এদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রথম দফায় তালিকা প্রকাশ করার পরা মে মাসে দ্বিতীয় কিস্তি নথি প্রকাশের কথা রয়েছে। এরই একটি তালিকা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে দ্য নিউ এইজ পত্রিকায়।
তাতে যাদের নাম উঠে এসেছে তার মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ, তার স্ত্রী নিলুফার জাফর এমপি ও তার পরিবার। বলা হয়েছে তারা বৃটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে অফসোর কোম্পানির মালিক।
তবে এ ছাড়া ওই তালিকায় রয়েছে সামিট ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড মার্কেন্টাইল করপোরেশন প্রাইভেট এর চেয়ারম্যান ও ৫ জন ডাইরেক্টর অফসোর কোম্পানির মালিকানায় রয়েছেন। তারা একই পরিবারের সদস্য। তারা হলেন কোম্পানির চেয়ারম্যান আজিজ খান, তার স্ত্রী আঞ্জুমান আজিজ খান, তাদের কন্যা আয়েশা আজিজ খান, চেয়ারম্যানের ভাই জাফর উমেদ খান, আজিজ খানের ভাজিতা মো. ফয়সল করিম খান। এর মধ্যে জাফর উমেদ খান ও মো. ফয়সাল করিম খান বাদে তারা বৃটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের কোম্পানি নিবন্ধন করিয়েছেন সিঙ্গাপুরের ঠিকানায়।
এ বিষয়ে ‘বাংলাদেশী বিজনেসমেনস লিঙ্ক টু অফসোর কোম্পানিজ রিভিলড’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ঢাকার নিউ এইজ পত্রিকা। আইসিআইজের সঙ্গে যৌথভাবে পানামা পেপারস বিশ্লেষণ করে এ পত্রিকাটি। তারই ভিত্তিতে ওই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, অন্য সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে এক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়ে যায় সামিট গ্রুপ পরিবারের ডাইরেক্টররা। তারা অফসোর কোম্পানির শেয়ারের মালিকানা নিতে নিজেদেরকে ডাইরেক্টর বা শেয়ারহোল্ডার দেখানোর চেয়ে নমিনি হিসেবে দেখিয়েছে।
ওই তালিকায় আরও নাম আছে অনেক বাংলাদেশী ব্যবসায়ীর, যারা বৃটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে অফসোর কোম্পানির মালিক। এর মধ্যে আছেন ইউনাইটেড গ্রুপের হাসান মাহমুদ রাজা, খন্দকার মইনুল আহসান (শামীম), আহমেদ ইসমাইল হোসেন ও আখতার মাহমুদ।
এতে নাম আছে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি এ এমএম খানের। ওই তালিকায় নাম আছে মোমিন টি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজমল মইন, পাট ব্যবসায়ী দিলিপ কুমার মোদির। তারা দু’জনেই ২০০৫ সালের মার্চে রাইটস্টার প্রাইভেটের পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হন।
সি পার্ল লাইন্সের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ সিরাজুল হকের নামও আছে এতে। বলা হয়েছে তিনি সভারিন ক্যাপিটল প্রাইভেটের ডাইরেক্টর বা শেয়ারহোল্ডার। এটা নিবন্ধিত হয়েছে ২০১০ সালে। ওই তালিকায় নাম আছে বাংলা ট্রাক নিমিটেডের মো. আমিনুল হক, নাজিম আসাদুল হক ও তারিক একরামুল হকের। এ ছাড়া নাম আছে ওস্টোর্ন মেরিনের পরিচালক সোহেল হাসানের।
নাম আছে মাসকট গ্রুপের চেয়ারম্যান এফএম জুবাইদুল হকের। বলা হয়েছে তিনি তার স্ত্রী সালমা সহ অফসোর কোম্পানি স্প্রিয় শোর ইন্টারন্যাশনালের ডাইরেক্টর/শেয়ারহোল্ডার হন ২০০৭ সালের মে মাসে। এ তালিকায় আরও নাম আছে শেতু করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাবুদ্দিন চৌধুরীর। স্ত্রী উম্মেহর সঙ্গে তিনি ২০০৭ সালের আগস্টে তালাভেরা ওয়াল্ডওয়াইডের ডাইরেক্টর/শেয়ারহোল্ডার হন।
স্কাপর্ক লিমিটেড এবং অমনিকেম লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখারুল আলমের নাম রয়েছে ওই তালিকায়। রয়েছে তার পুত্রবধুৃ ফওজিয়া নাজের নাম। বলা হয়েছে তারা সিটিলিঙ্কের মালিক। তারা ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে সিঙ্গাপুরের ঠিকানা ব্যবহার করে পাউমি টেকনোলজি লিমিটের ডাইরেক্টর/শেয়ারহোল্ডার হন।
আবদুল মোনেম লিমিটেডের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আএসএম মহিউদ্দিন আহমেদ, তার স্ত্রী আসমা মোনেনের নাম রয়েছে এতে। বলা হয়েছে তারা ২০০৮ সালের জুনে অফসোর কোম্পানি ম্যাগনিফিসেন্ট ম্যাগনিটিউডের ডাইরেক্টর/শেয়ারহোল্ডার হয়েছেন।
এতে আরও নাম রয়েছে অনন্ত গ্রুপের শরিফ জাহিরের নাম। বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি সিপিএটি (সিঙ্গাপুর) প্রাইভেট লিমিটেডের ডাইরেক্টর হয়েছেন।
সুত্রঃ মানবজমিন, ৬ এপ্রিল ২০১৬
- পানামা পেপারসে বাংলাদেশী আরও যাদের নাম, যুগান্তর, ০৬ এপ্রিল, ২০১৬
কর ফাঁকি ও অর্থ পাচার সংক্রান্ত সাড়া জাগানো অফশোর লিকস তথা পানামা পেপারসে নতুন করে আরও ১০ বাংলাদেশী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে নয়জন ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠান। এনিয়ে ফাঁস হওয়া পানামা পেপারসে বাংলাদেশের ৩৪ জন ব্যক্তি ও দুটি প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে, যাদের বিপরীতে মোট ৪৫টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এদের মধ্যে ২৩ জনের বাড়ির ঠিকানাও উল্লেখ আছে।
প্রাপ্ত নথিপত্রে দেখা যায় চার ব্যক্তির নামে দুইটি করে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। যৌথ অ্যাকাউন্ট রয়েছে দুটি। তালিকায় নতুন করে যাদের নাম আসলো তারা হলেন- এএফএম রহমাতুল্লাহ বারী, ক্যাপ্টেন এমএ জাউল, সালমা হক, কাজী রায়হান জাফর, মির্জা এম ইয়াহইয়া, মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, সৈয়দা সামিনা মির্জা ও জুলফিকার হায়দার। আর প্রতিষ্ঠানটি হলো- বিবিটিএল।
এর আগে ফাঁস হওয়া নথিতে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে – আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ ও তার স্ত্রী নিলুফার জাফর, মার্কেন্টাইল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান আজিজ খান, তার স্ত্রী আঞ্জুমান আজিজ খান, কন্যা আয়েশা আজিজ খান, ভাই জাফর উমায়েদ খান ও ভাগ্নে ফয়সাল করিম খান, ইউনাইটেড গ্রুপ অব কোম্পানির হাসান মাহমুদ রাজা, খন্দকার মঈনুল আহসান (শামীম), আহমেদ ইসমাইল হোসেন, আখতার মাহমুদ, স্কয়ার গ্রুপ অব কোম্পানিজের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরী, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. এএমএম খান, মমিন টির পরিচালক আজমত মঈন, পাট ব্যবসায়ী দিলিপ কুমার মোদি, সি পার্ল লাইন্সের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ সিরাজুল হক, বাংলা ট্রাক লিমিটেডের মো. আমিনুল হক, নাজিম আসাদুল হক ও তারিক ইকরামুল হক, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপ বিল্ডার ক্যাপ্টেন সোহাইল হাসান, মাসকট গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান এফএম জোবায়দুল হক, সেতু কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, তার স্ত্রী উম্মে রব্বানা, স্পার্ক লিমিটেড ও অমনিকেমের চেয়ারম্যান ইফতেখারুল আলম, আবদুল মোনেম লিমিটেডের নির্বাহী ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম মহিউদ্দিন মোনেম, তার স্ত্রী আসমা মোনেম এবং অনন্ত গ্রুপের শরীফ জহির।
অর্থ পাচারের তালিকায় ৪৬ বাংলাদেশী, যমুনা টিভি রিপোর্ট, Apr 6, 2016
রিলেটেড লিংকঃ