আদর্শের মোড়কে জাহেলী রাজনীতি কি কাম্য?
আত্মসমালোচনা: মোড়ক (বা Label) ইসলামের হলেও অভ্যন্তরে সেই আত্মিক প্রাণশক্তি আছে কি?
দৃষ্টিভঙ্গি: জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা ভালো; কিন্তু দলের অভ্যন্তরে রাজনীতি চালু হওয়া উচিত নয়। আদর্শবাদী দলে ‘তেল রাজনীতি’ থাকে না। তাছাড়া ‘ছাটাই পলিটিক্স’, ‘ল্যাং মারা পলিটিক্স’ ইত্যাদিও আদর্শবাদী দলের চর্চা নয়। আদর্শহীনেরা যেটা প্রকাশ্যে করে ইসলামী দল সেটা লোক চক্ষুর অন্তরালে ও চমৎকার পদ্ধতিগত উপায়ে (বা Systematic way তে) করতে পারে না; করে থাকলে সেটা যথার্থ ইসলামী দল নয়।
আনুগত্যের মাপকাঠি কি ‘তোষামোদী’ ও ‘জি হুজুর- জি হুজুর করা’?
আত্মসমালোচনা: নিজ নিজ মত প্রতিষ্ঠা বা অন্ধ অনুসারী তৈরির লক্ষ্যে কুরআন-হাদীসকে নিজ মতানুসারে উপস্থাপন করা হয় কি?
দৃষ্টিভঙ্গি: কুরআনকে নিজের মতের অনুসারী বানানোর চিন্তাও ঈমান ধ্বংসকারী। বরং নিজেকে কুরআনের অনুসারী বানানো এবং সে অনুযায়ী নিজেকে তৈরি বা সংশোধন করা প্রয়োজন।
আত্মসমালোচনা: সভাপতিকে সন্তুষ্ট রাখলে কি অনেক ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়?
দৃষ্টিভঙ্গি: সভাপতিকে সন্তুষ্ট রাখার কারণে আদর্শবাদী দলে কোনো বিশেষ সুবিধা পাওয়ার কথা নয়। ভিন্নমত পোষণ করেও শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা বজায় রাখা যায়। মত ভিন্ন হওয়ার কারণে তিরস্কার, ছাটাই, বদলী বা অন্য শাস্তি অন্তত ইসলামী দলে দেখা যাওয়ার কথা নয়।
আত্মসমালোচনা: শুধুমাত্র নিজ চিন্তার অন্ধ অনুসারীদের মূল্যায়ন করা হয় কি? এর বাইরের জনশক্তিকে কি বিভিন্নভাবে নাজেহাল ও হেয় করা হয়? সভাপতির মতের বিপরীতে গেলেই কি সেটা হয়ে যায় আনুগত্যের সমস্যা? তখন কি ব্যক্তিকে হতে হয় ‘ছাটাই পলিটিক্সের’ শিকার? উর্ধ্ব থেকে তিনি কি একেবারে তলানিতে চলে আসেন?
দৃষ্টিভঙ্গি: মূল্যায়ন নির্ভর করা উচিত ইসলামী নৈতিকতা ও বৈষয়িক যোগ্যতার ভিত্তিতে; ব্যক্তিগত চিন্তা নিজের সাথে মিললো কিনা সে ভিত্তিতে নয়। আর ইসলাম- আল্লাহ ও রাসূল (সা.) ছাড়া অন্য কারোর অন্ধ আনুগত্য করতে নিষেধ করে। কুরআনিক প্রমাণ: ৪/আন নিসা:৫৯, ৯/সূরা আত-তাওবা:৩১ এবং ৩৩/সূরা আল আহযাব:৬৭-৬৮ ইত্যাদি। তাছাড়া কারোর ব্যক্তিগত মত ভিন্ন হওয়ার কারণে তাকে নাজেহাল ও হেয় করার কাজ ব্যক্তিস্বার্থের কাজ হতে পারে; এ কাজকে কোনোভাবেই ইসলামের স্বার্থরক্ষার কাজ বলা যায় না।
আত্মসমালোচনা: অপমানিত হওয়ার জন্য কি কেউ ইসলামী দল করে? সরকার কর্তৃক ভিন্ন মতাবলম্বী কর্মকর্তাদের বাধ্যতামুলক অবসরে পাঠানোর মতো কাজ দলে বিদ্যমান নেই তো?
দৃষ্টিভঙ্গি: অপমানিত হতে নয় বরং দুনিয়ার জীবনেই ক্ষুদ্র এক জান্নাতী পরিবেশ প্রাপ্তির আশাতেও অনেকে ইসলামী দল করে। এ আশা ইসলামের প্রাণশক্তি ও পারস্পরিক শুভাকাঙ্ক্ষার কারণে অমূলক নয় বরং যুক্তিপূর্ণ। আর আদর্শিক বিষয়ে উপলব্ধিগত, তুচ্ছ ও ব্যক্তিগত মতপার্থক্য কখনো ভাতৃত্ব বন্ধনকে দুর্বল করার কথা নয়।
সংশোধনকারীকে প্রতিপক্ষ ভাবা কি উচিত?
আত্মসমালোচনা: স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও ইহতিসাবের অবাধ সুযোগ থাকে কি? সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মাঠ পর্যায় (বা Root Level) এর পরামর্শকে ঠিকমতো আমলে নেওয়া হয় কি?
দৃষ্টিভঙ্গি: বিকৃতি রোধে সতর্ক করার কেউ না থাকাটাই বিপদের কারণ। তাই, কুরআনে কাজে-কর্মে পরামর্শ নেওয়ার কথা বলা আছে। প্রমাণ: ৩/সূরা আলে ইমরান:১৫৯। মাঠ পর্যায়ে কাজের ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ের লোকদের পরামর্শই অধিক ফলপ্রসূ হয়ে থাকে। কারণ পরিস্থিতি সকল এলাকায় হুবহু এক রকমের থাকে না।
আত্মসমালোচনা: পরামর্শ গ্রহণ করাটা কি এককভাবে এবং সম্পূর্ণরূপে সভাপতির ব্যক্তিগত ইচ্ছার অধীন? অধিকাংশের মত যাই হোক সভাপতি কি সর্বদা নিজ মতই মিটিং এ পাশ করান? যদি সভাপতির নিজ সিদ্ধান্তে কাজ করে কোনো ক্ষতি হয় তাহলে সে দায় কি উল্টো পরামর্শ সভার উপর চাপানো হয়? আর সফল হলে কি পূর্ণ যোগ্যতা মূলত সভাপতির?
দৃষ্টিভঙ্গি: রাসূল (সা.) কর্তৃক নিজের মত পরিহার করে সাহাবীদের (রা.) মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। তাই সভাপতি নিজেকে স্বৈরশাসক ভাবতে পারেন না। সবার বা অধিকাংশের মতামতের বিপরীতে সিদ্ধান্ত নেওয়াকে নিয়ম বানানো ঠিক নয়। সম্মিলিত পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করে ফল ভালো হোক আর মন্দ হোক- এ বিষয়ে কারোর দোষ বা গুণ বর্ণনা করাটা ইসলামের কাজ নয়।
আত্মসমালোচনা: স্পষ্টভাষী, গঠনমূলক সমালোচনাকারী ও ইহতেসাবকারীকে প্রতিপক্ষ বা পথের কাঁটা হিসেবে ঘায়েল করা হয় কি?
দৃষ্টিভঙ্গি: সামনে প্রশংসাকারী আর আড়ালে নিন্দাকারী ব্যক্তি ইসলামে ঘৃণিত। পক্ষান্তরে উপযুক্ত ফোরামে, যথাযথভাবে, সামসা-সামনি, স্পষ্ট করে, গঠনমূলকভাবে ও সংশোধনের লক্ষ্যে সমালোচনাকারীকে ইসলাম উপকারী ও আবশ্যক মনে করে। তাছাড়া চাটুকাররা সাধারণত সুযোগ-সন্ধানী হয় আর ইহতিসাবকারীরা সাধারণত স্বার্থহীনভাবে কাজ করে থাকে।
আত্মসমালোচনা: ব্যক্তিস্বার্থের হানী বা সংগঠন হতে প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধার ব্যঘাতের ভয়ে জবাবদিহিতা আদায় বা গঠনমূলক পর্যালোচনা না করে ‘জি হুজুর’ নীতি অনুসরণ করা হয় কি?
দৃষ্টিভঙ্গি: পার্থিব স্বার্থ হারানোর আশংকায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করে ‘জি হুজুর’ ভূমিকার দ্বারা দুনিয়ায় পদ-পদবী, চাকরী, সম্মান ইত্যাদি পাওয়া যেতে পারে কিন্তু পরকালে ঐ ভূমিকার জন্য কি আল্লাহর কাছে আসামী হতে হবে না?
আত্মসমালোচনা: জনশক্তিরা কি আমানতস্বরূপ নয়? নাকি শেয়ালের কাছে মুরগি বন্ধক দেওয়ার মতো?
দৃষ্টিভঙ্গি: জনশক্তি হলো আমানাতস্বরূপ। নিজের ক্ষতি করে হলেও জনশক্তির হিফাজাত করাই প্রকৃত দায়িত্বশীলের কাজ।
দ্বায়িত্বশীলকে সন্তুষ্ট করাই কি সাংগঠনিক কাজের উদ্দেশ্য?
আত্মসমালোচনা:উর্ধ্বতন নেতা আসলে দামী ফলমূল কেনার অর্থ (টাকা) আছে কিন্তু একই শাখার অনেক জনশক্তি হয়তো ঠিকমতো খেতে পায় না- এমন অবস্থা আছে কি? যে শাখার সভাপতি বেশি বেশি ভালো খাওয়াতে পারেন, উর্ধ্বতন নেতাদের খুশি করতে পারেন উর্ধ্বতন নেতাদের কাছে তিনিই কি অনেক প্রিয় ও যোগ্য ব্যক্তি হয়ে যান?
দৃষ্টিভঙ্গি:দায়িত্বশীলের বৈধ নির্দেশের আনুগত্য, নিজ দায়িত্ব পালন, দায়িত্বশীল ভুল করছে মনে হলে তাকে শুধরে দেওয়া, দায়িত্বশীলকে ভালোবাসা ইত্যাদি সকল দায়িত্ব পালনই জরুরী। দায়িত্বশীলদের খুশি করাকে লক্ষ্য বানানোর প্রয়োজন নেই। আল্লাহর সন্তোষ ছাড়া আর কারোর সন্তোষকে লক্ষ্য বানালে তা তো শিরক পর্যায়ে চলে যায়। আর দায়িত্বশীলরা পরিশ্রম করেন বিধায় তাদেরকে সামর্থের আলোকে ভালো খাওয়ানো যেতে পারে। কিন্তু তা যেনো বিলাসীতা, প্রদর্শনী, স্বার্থসিদ্ধি,অপচয় ইত্যাদির পর্যায়ে না পড়ে। বিশেষ করে ঠিকমতো খেতে পায় না এমন জনশক্তির উপস্থিতিতে উর্ধ্বতন নেতাকে অতিরিক্ত আপ্যায়ন করানো ঠিক নয়। আর জনশক্তির এ দরিদ্র অবস্থায় অতিরিক্ত খরচ করার প্রবণতার বিরোধিতা তো সচেতন দায়িত্বশীলমাত্রই করে থাকেন।
মতপ্রীতি, ব্যক্তিপ্রীতি, এলাকাপ্রীতি, প্রতিষ্ঠান প্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ইত্যাদি আছে কি?
আত্মসমালোচনা: নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে পছন্দমতো পদে বসানোর চেষ্টা ও আয়োজন করা হয় কি?
দৃষ্টিভঙ্গি: দ্বীনী যোগ্যতা ও বৈষয়িক যোগ্যতার মাপকাঠিতে দায়িত্ব না দিয়ে নিজ পছন্দকে মাপকাঠি বানানো দ্বীনদারী তো নয়ই বরং তা হলো নফসের পূজা।
আত্মসমালোচনা: সংগঠনে চিন্তাপ্রীতি, এলাকাপ্রীতি, প্রতিষ্ঠান প্রীতি, সেচ্ছাচারিতা ইত্যাদি আছে কি? ওমুক ভাই, তমুক ভাই, এলাকা, ‘ইজম’ এগুলো সংগঠনে স্থান পাচ্ছে কি?
দৃষ্টিভঙ্গি: সার্বিকভাবে সততা ও যোগ্যতার বিচার না করে আত্মীয় হওয়ার কারণে, নিজ এলাকার লোক হওয়ার কারণে, ব্যক্তিগত চিন্তায় মিল থাকার কারণে বা নিজের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকার কারণে যদি কম যোগ্য লোককে পদ দেওয়া হয় তাহলে তা আর ইসলাম থাকে না; তখন তা জাতীয়তাবাদে পরিণত হয়ে যায়। ইসলামে এ সকল ‘ইজম’ এর কোনো স্থান নেই।
আত্মসমালোচনা: নেতা হবার জন্য পরোক্ষ চেষ্টা বা বিশেষ ব্যক্তিকে খুশি করা লাগে কি?
দৃষ্টিভঙ্গি: ইসলামী নেতার কর্তব্য হলো চাটুকার, সামনে প্রশংসাকারী, সুযোগসন্ধানী, ‘তেলবাজ’ ও মানুষকে খুশি করাকে লক্ষ্য নির্ধারণকারী লোকদেরকে যথাসম্ভব সকল পর্যায়ের নেতৃত্ব থেকে দূরে রাখা। আর অনুসারীর কাজ হলো এ সকল বদ স্বভাব থেকে সর্বদা দূরে থাকা। নেতা হতে না চাইলে কেউ সাধারণত চাটুকার হয় না, সামনে প্রশংসা করে না এবং সংগঠন থেকে পার্থিক স্বার্থ আদায়ে তৎপর হয় না। এ কাজে তৎপর হলেই বুঝতে হবে এ লোক নেতা হওয়ার যোগ্য নয়।
আত্মসমালোচনা: দায়িত্ব অর্পনের সময় কে নেতাকে ‘জি হুজুর’ করবে, কার মাধ্যমে নেতার অপকর্ম ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা নেই- এসবও কি বিবেচনায় আনা হয়?
দৃষ্টিভঙ্গি: অন্ধ আনুগত্য করা যেমন অন্যায় তেমনি অন্ধ আনুগত্য দাবি করাও অন্যায়। আর অন্যায় দেখেও প্রতিকারবিহীন থাকা এবং অন্যায়কারীর গুণকীর্তন করা কোনোভাবেই ইসলামী স্বভাব হতে পারে না। নেতাকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা করা মানেই ‘জি হুজুর- জি হুজুর’ করা নয়। আর নেতার অপকর্মের সাক্ষী হয়ে গেলে সংশোধনের নিয়তে উপযুক্ত স্থানে ও যথাযথ প্রক্রিয়ায় এ তথ্য দেওয়া উচিত। কারোর অপকর্ম জেনেও সে কাজের প্রশংসা করা মানেই মিথ্যার কবীরা গুনাহে জড়িত হওয়া।
সংগঠনের অর্থে উপহার বিনিময়, হঠাৎ উন্নত জীবন, কর্মহীন বক্তব্য ও নেতাগিরি আছে কি?
আত্মসমালোচনা:সংগঠনের অর্থ দিয়ে উপহার-উপঢৌকন বিনিময় করাকে কি ভাতৃত্বের বহি:প্রকাশ বলে মনে করা হয়?
দৃষ্টিভঙ্গি: উপহার নিজের উপার্জন বা নিজের অর্থ থেকে দেওয়া উচিত। মানুষের কষ্টের হালাল টাকায় পরিচালিত সংগঠনে নেতারা নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক উপহার বিনিময় করবেন- এটা শোভন আচরণ হতে পারে কি? সংগঠনের অর্থ দিয়ে এ উপহার কি সর্বস্তরের জনশক্তি পায়? তাহলে নেতারা বহু উপহার পাবেন কেনো? তাছাড়া মাঠ পর্যায়ের একজন লোককে আন্দোলনে আকৃষ্ট করতে এ উপহার দেওয়া কি অধিক ফলপ্রসূ নয়? তাছাড়া সংগঠনের অর্থ দিয়ে উপহার দেওয়া হচ্ছে বুঝতে পারলে সক্রিয় ব্যক্তিগণ কি তাতে আপত্তি জানানোর কথা নয়?
আত্মসমালোচনা: কান্নাকাটি করে সভাপতির শপথ নেওয়া লোকটি কি হঠাৎ করে বিলাসী বিছানায় ঘুমানো শুরু করেন? রাতারাতি ভালো ভালো খাওয়া-দাওয়া শুরু করেন? পরে কি তিনি শরীরকে মেদবহুল করে ফেলেন? ব্যক্তিগত কাজে তিনি কি সর্বদা সংগঠনের মোটর সাইকেল ব্যবহার করেন? হঠাৎ দামী জামা ও প্রয়োজনাতিরিক্ত দামী মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু করেন কি?
দৃষ্টিভঙ্গি: নেতা হওয়ার পর রাতারাতি জীবনমান উন্নত হয়ে যাওয়াটা প্রশ্নবোধক। তবে, নেতার কাজকে সহজ ও বাধামুক্ত করতে কিছুটা অগ্রাধিকার প্রয়োজনীয় ও স্বাভাবিক। কিন্তু প্রয়োজন যেনো বিলাসীতায় পরিণত না হয়- সে খেয়াল রাখা উচিত। ইসলাম সকলকেই পরিশ্রমী হতে শেখায়; কেবল কর্মীকে নয়। তাছাড়া দলের সম্পদ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে, দলীয় ব্যস্ততার কারণে দায়িত্বশীলের ব্যক্তিগত কাজ করা সম্ভব না হলে এবং ঐ ব্যক্তিগত কাজ সম্পাদনে দায়িত্বশীল বেশি সময় ব্যয় করলে দলের কাজে ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকলে সামষ্টিক অনুমতি সাপেক্ষে ও বৃহত্তর স্বার্থে নির্দিষ্ট সীমার ভেতরে থেকে কিছুটা সুবিধা গ্রহণ করা যেতে পারে। কর্মীদেরকে অবহেলিত রেখে নেতা ব্যক্তিগত উপভোগ করবেন- এটা ইসলামী রুচি হতে পারে না। যারা ধনী হওয়ার পরও গায়ে অতিরিক্ত দামী পোষাক পরেন না, যাদের শরীর পরিশ্রমজনিত ঘামে ভেজা, সংগঠনের জন্য পরিশ্রম করতে করতে যাদের চেহারায় থাকে ক্লান্তির ছাপ ঐ দায়িত্বশীলদের সাথে বুক মিলিয়ে যে প্রশান্তি পাওয়া যায়, যে আধ্যাত্বিকতা অনুভূত হয় সেই অনুভূতি হাজার টাকার সুগন্ধি মাখানো পলিটিক্যাল লিডারদের সাথে হাত মেলালে পাওয়া যায় না।
আত্মসমালোচনা: নেতার বক্তব্য কি কেবল শ্রোতার জন্য? নেতার জন্যও নয় কি?
দৃষ্টিভঙ্গি: নেতাদের উচিত ইসলাম মানায় সকলের চেয়ে এগিয়ে থাকা। কর্মে বা আমালে পিছিয়ে থাকা লোকের দ্বারা উচ্চ ব্ক্তব্য সাধারণত ফলপ্রসূ হয় না। কথার সাথে কজের মিল থাকলেই সেই কথার মধ্যে বরকত আসে।
আত্মসমালোচনা: অধীনস্তের সাথে নেতারা কি দাস বা প্রজাসুলভ আচরণ করেন?
দৃষ্টিভঙ্গি: ইসলামী নেতারা কর্মীদের সাথে ভাতৃসুলভ আচরণ করে থাকে; দাসসুলভ আচরণ করার প্রশ্নই আসে না।
শেষকথা:
উপরিউক্ত অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলো সংগঠনে অনুপ্রবেশ করলে বা লালিত হলে সংগঠনের অভ্যন্তরীণ প্রাণশক্তি (বা রুহানিয়াত) নষ্ট হয়ে যাবে। সংগঠন মাকড়সার জালের মতো কেবল উপরের কাঠামো নিয়ে টিকে থাকবে এবং হয়ে যাবে নিছক একটি গতানুগতিক রাজনৈতিক সংগঠন।
তাই, কিছু নষ্ট ‘পলিটিক্যাল লিডার’ এর জন্য ইসলামী সংগঠনকে অপবিত্র হতে দেওয়া উচিত হবে না। তাই, যিনি যে ময়দানে আছেন সেই ময়দানে সংগঠনকে পাহারা দিয়ে রক্ষা করা তার দায়িত্ব। শহীদের পরিবার, আহত ভায়েরা, নির্যাতীত জনতা আজও স্বপ্ন দেখেন এক গঠনমূলক ও আমূল পরিবর্তনের।
তাই এই পবিত্র সংগঠনে কারোর দ্বারা কালিমা লেপন করা বা করানো যাবে না। এ সংগঠনের জনশক্তি ও সুধীরা একে অনেক পবিত্র মনে করে। জনশক্তিদেরকে সেই সুধারণার যোগ্য হতে হবে এবং সকল ক্ষেত্রে ইসলামের সঠিক অনুসরণ করতে হবে।
(লেখক কর্তৃক সংগৃহীত, সম্পাদিত)