লিখেছেনঃ আবুবকর সিদ্দিক
”৭১ এ জামায়াতের ঐতিহাসিক ভুল”।এই ভুলের বোঝা ছাত্র শিবির কেন বহন করবে?এই ভুলের জন্য জামায়াত ক্ষমা চায়নি,তাই জামায়াত জনবিছিন্ন।”
আমাদের কিছু ইসলামী আন্দোলনের ভাই এবং ইসলাম বিরোধী মহলের এমন বক্তব্য নতুন নয়। এই ভাইরা নাকি জামায়াতের কারনে ছাত্র শিবির দিয়ে একটি সম্ভাবনাময় ইসলামী বিপ্লব সাধন করতে পারেননি।তাই এখনও মাঝে মধ্যে বিপ্লবী ইতিহাস লিখে যাচ্ছেন। ভাবখানা এমন যেন উনারাই ১৯৭৭ সালে ছাত্র শিবির জম্ম দিয়েছেন। অথচ উনারা ভাল করেই জানেন ১৯৭৭ সাল হলো ছাত্র শিবিরের ”কাগজি জম্ম সাল”।শুধু ইসলামী ছাত্র সংঘ নামের পরিবর্তন সাল।
মীর কাসেম আলী এবং শহীদ কামারুজ্জামান জামায়াতে ইসলামীর নির্দেশনার আলোকেই ১৯৭৭ সালে ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং সেক্রেটারী জেনারেল হয়েছিলেন। ছাত্র শিবির জামায়াতের ব্রেন চাইল্ড।এটা ঐতিহাসিক সত্য।এই ঐতিহাসিক সত্য এবং ‘৭১ সালে জামায়াতের ভুমিকা না জেনে আজ পর্যন্ত ছাত্র শিবিরের সাথী এবং সদস্য হিসাবে কেউ শপথ নিয়েছে এমন কারো সংবাদ আমার জানা নেই।শিবিরের সাথী-সদস্য যারা হয় তারা এই ব্যাপারে স্পষ্ট ধারনা-আস্থা নিয়েই শপথ নেয়।অতএব জামায়াতের ভুলের বোঝা শিবির কেন বহন করবে –এমন উদ্ভট বিভ্রান্তি অবান্তর।
১৯৪৭ সালে মাওলানা আবুল কালাম আযাদ সহ ভারতের বড় বড় অনেক আলেম অখন্ড ভারত চেয়েছেন।তারা পাকিস্তান চাননি।এই আলেম সমাজকে কেউ ইসলামের দুশমন বলেনি ।ভারতের দালাল-হিন্দুদের দালাল,মুসলমানের শত্রু বলেনি।১৯৭১ সালে সকল ইসলামী দল,আলেম-পীর এবং ইসলাম পন্থী ব্যক্তিমাত্রই অখন্ড পাকিস্তান চেয়েছিল।শেখ মুজিব নিজেই ২৩ মার্চ-৭১ পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চাইলেন।উচ্চপর্যায় গোলটেবিল বৈঠক করলেন।তাহা কে না জানে ? বিভিন্ন দেশে স্বাধীনতার মত মৌলিক প্রশ্ন ভিন্নমত শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই নয়।এমন নজির অনেক বিদ্যমান।অনেক বামপন্থী দল যুদ্ধে অংশ নেয়নি।দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও পুর্ব বাংলা সর্বহারা পাটির দেয়াল লিখন দেখেছি।দোষটা শুধু জামায়াতের ঘাঁড়ে কেন?
মিশরে ইখওয়ানুল মুসলিমিন (মুসলিম ব্রাদারহুড) তো স্বাধীনতা বিরোধী-রাজাকার ছিল না? জম্ম লগ্ন হতেই তাদের মাথায়-ঘাঁড়ে কড়াত কেন?
১৯৬৯ সালে মেধাবী ছাত্রনেতা (ছাত্র সংঘের) আব্দুল মালেককে হত্যা করা হয়েছিল কি রাজাকার হিসাবে?
১৯৬৯ সালে পল্টনে আওয়ামীলিগের আক্রমনে জামায়াতের ৩ জন শাহাদত বরনের কারন কি?তখনও কি জামায়াত স্বাধীনতা বিরোধী-রাজাকার ছিল?
জামায়াতের গণভিত্তি তৈরীতে ‘৭১ কোন ফ্যাক্টর নয়, এর প্রধান কারনগুলো হচ্ছে;
[১] শিবির হতে যারা আসবে তারাই সর্বত্র মুল নেতা হবেন–এমন উদ্ভট চিন্তা এবং তার বাস্তবায়ন।বাহির হতে রিক্রুট ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ শিক্ষক বা অন্য পেশার যোগ্য কোন ব্যক্তি নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা রাখেনা–এমন মানসিকতা একট শক্তিশালী ব্যারিকেড (barricade) দাড় করিয়ে জনবিচ্ছন্নতার পথ সহজ করেছে ।
[২] সংগঠনের অভ্যন্তরীন কাজের চাপে নেতারা নিজ এলাকা হতে হাজার মাইল দুরে অবস্থান করেন।
[৩] অতি-রাজনৈতিক,অতি-অর্থনৈতিক কর্ম ইসলামী আন্দোলনের মুল কর্মধারা বাধার সম্মুখীন করেছে ।
[৪] শিক্ষা-সমাজ-সাংস্কৃতিক বিপ্লবের আগেই ”ইসলামী রাজনৈতিক বিপ্লবের” ধ্যান-ধারনা-কর্মকৌশল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়া
[৫]।সমাজ-সাংস্কৃতিক বিপ্লবের আগে ইসলামী বিপ্লব হবে না, এমন যুক্তি আমলে না নেয়া ।
[৬] থিঙ্ক ট্যাংক তৈরী,প্লান, তাদের মুল্যায়ন এবং তাদের গবেষনার গুরুত্ব না দেয়া।
[৭] বিপুল সংখ্যক ইসলামিক স্কলার তৈরীর ব্যর্থতা।এই ভাবে লিখতে থাকলে আরো কারন বের হবে।
৭১ মোছার সাদা-কালো কোন কালি জামায়াতের হাতে নেই।আছে ইসলামী আদর্শ।এই আদর্শের মডেল হয়ে গ্রামে-গঞ্জে-হাটে-বাজারে সাধারন মানুষের কাতারে-অন্তরে জামায়াতের নেতা-কর্মিরা প্রবেশের পথ খুজে বের করতে হবে। আস্তিক-নাস্তিক-জাতীয়তাবাদী-ধর্মনিরপেক্ষবাদী-ইসলাম পন্থীসহ সকল পথ-মতের মানুষকে একোমোডেট করে একসাথে চলার সিদ্ধান্ত না থাকলে জনবিচ্ছিন্নতা কমানো সম্ভব নয়।
উৎসঃ লেখকের ফেইসবুক স্ট্যাটাস, ১৬.১০.১৫
ভাল পরামশে’র জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ